শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথ

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ট্রলার-স্পিডবোটে অবাধে চলাচল

প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে অবাধে চলছে ট্রলার। বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকা, মাদারীপুর, ৭ এপ্রিল বিকেল
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে সাত দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউন চলার সময় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যাত্রীবাহী সব ধরনের নৌযান। অথচ প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে অবাধে চলাচল করছে ট্রলার ও স্পিডবোট। এই নৌযানগুলোতে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।

বুধবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সরেজমিনে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বন্ধ রয়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোট কাউন্টার। তাই পন্টুনগুলোয় নেই যাত্রীরা। তাঁদের বিচরণ পাওয়া গেল ঘাটের পাশে বেড়িবাঁধের ওপরে। এখানে তাঁরা অপেক্ষা করছেন পদ্মা পারাপারের জন্য। জরুরি ভিত্তিতে মাঝেমধ্যে দু–একটি ফেরি ছাড়া হচ্ছে। ফেরিতে কেউ কেউ উঠতে পারলেও বেশির ভাগই উঠতে পারছেন না ফেরিতে। যাত্রীরা উপায় না পেয়ে পারাপার হচ্ছেন ট্রলার ও স্পিডবোটে। ভাড়া কিছুটা কম হওয়ায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় প্রতিটি ট্রলারে। ট্রলার ও স্পিডবোটে ওঠা বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। আবার কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও নিয়ম মেনে তা কেউ পরছেন না। ট্রলার-স্পিডবোটে সামাজিক দূরত্ব নেই, নেই লাইফ জ্যাকেটও।

শিমুলিয়া থেকে ট্রলারে আসেন শহীদুল। মাস্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক নাক-মুখ ঢেকে রাখলে গরমে দম আটকাইয়া আসে। নিশ্বাস ছাড়তে পারি না। তাই মাস্ক পরি নামে মাত্র।’

কেন পরেন মাস্ক? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক না পরলে জরিমানা করে, গাড়িতে উঠতে দেয় না। তাই বাধ্য হইয়া মাস্ক পরি।’

খুলনাগামী যাত্রী আলী আকবর বলেন, ‘কাপড়ের দোকানে কাজ করি। এখন কাম বন্ধ। তাই ঢাকা থেকে বাড়িতে যাচ্ছি। ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে যাই। কিন্তু ফেরিতে উঠতে না পাইরা স্পিডবোটে পদ্মা পারাপার হইছি। ওরা গাদাগাদি করে বোটে যাত্রী ওঠায়, আবার ১৫০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকাও নেয়।’

অন্যদিকে বাংলাবাজার বাস কাউন্টার থেকে কোনো বাস ছাড়া না হলেও যাত্রীরা ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন। একেকটি মাইক্রোবাসে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আবার মাহিন্দ্র, ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গুলিস্তান ফুটপাতে দোকান আমার। লকডাউনে দোকান বসাতে দেয় না। তাই দেশের বাড়িতে যাইতাছি। ঢাকা থেকে অনেক টাকা খরচ কইরা ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা ঘাট পর্যন্ত আইছি। পরে ১০০ টাকা দিয়া ট্রলারে পার হইছি। এপারে বাস চলে না, তাই মাইক্রোতে ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা দিয়া টিকিট কাটছি।’

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার ভোর থেকে সাত দিন সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়। এরপর থেকে জরুরি প্রয়োজনে উভয় ঘাটে দুটি ছোট ফেরি চালু রাখা হয়। এ ছাড়া রাত দুইটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হয়। দিনের বেলায় জরুরি ছাড়া ফেরিতে কোনো যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘সোমবার থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। স্পিডবোট ও ট্রলার অবৈধ নৌযান। এগুলো আমরা দেখি না। এগুলো নৌপুলিশ দেখে।’

এ ব্যাপারে চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচজন পুলিশ ফোর্স। নেই কোনো জলযান। কোনো রকম টহলে আছি। তবে বাংলবাজার থেকে কোনো ট্রলার ও স্পিডবোট ছাড়ার সুযোগ দিচ্ছি না। যা আসে ওপার (শিমুলিয়া) থেকে বিচ্ছিন্নভাবে আসে। ওদের থামানো যাচ্ছে না। ওপারের পুলিশ ঢিলেঢালাভাবে কাজ করে। তাই কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চুরিচামারি করে চালায়।’