হবিগঞ্জের টিক্কার হাওর

স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা

হবিগঞ্জে হাওরে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে র‍্যাবের হাতে আটক দুজন
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে স্বামীর সঙ্গে নৌকায় করে হাওরে ঘুরতে যাওয়া এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা ওই নারীর স্বামী ও তাঁর এক বন্ধুকে বেঁধে রেখে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদাও দাবি করা হয় বলে অভিযোগ।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার আটজনকে আসামি করে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এ মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২৫ আগস্টের এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। ভুক্তভোগী নারী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।

বাদী তাঁর মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি এক মাস আগে নিজ গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। গত ২৫ আগস্ট সকালে স্ত্রী ও এক বন্ধুকে নিয়ে উপজেলার টিক্কা হাওরে নৌকা ভ্রমণে বের হন। তাঁদের নৌকাটি হাওরে পৌঁছার পর পূর্বপরিচিত আট দুর্বৃত্ত নৌকাটি ঘিরে ফেলে। পরে নৌকাটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। তারা হাওরের একটি স্লুইসগেটের পাশে নৌকাটি নিয়ে গৃহবধূর স্বামী ও তাঁর বন্ধুকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

এরপর দুর্বৃত্তরা নববধূকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করা হয়। পরে হুমকি দিয়ে বলা হয়, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অন্য কাউকে জানানো হলে এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। হুমকি ও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী।

গত বুধবার ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি আজ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এ মামলার আবেদন করেন। বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজাহার গ্রহণ করার জন্য লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

এদিকে র‌্যাব-৯ হবিগঞ্জ সিপিসি ক্যাম্প-১–এর সদস্যরা উপজেলার মোড়াকরি গ্রাম থেকে আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি মিঠু মিয়া (২১) ও সোলাইমান রনি (২২) নামের দুজনকে আটক করেন। পাশাপাশি লাখাই থানার পুলিশ একই দিন মামলার এজাহারভুক্ত ৮ নম্বর আসামি শুভ মিয়াকে (১৯) আটক করে। তাঁদের সবার বাড়ি লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামে।

মামলার বাদী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর ধর্ষণের ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁর কাছে অপরাধীরা ৯ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অবশেষে তিনি নিরুপায় হয়ে আজ আদালতে মামলা করেন।

লাখাই থানার ওসি সাহিদুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীরা ঘটনাটি প্রথমে গোপন রাখেন। পুলিশ ঘটনা শোনার পর মামলা করার জন্য কয়েকবার বলেন। কিন্তু তাঁরা প্রথমে ভয়ে মামলা করতে চাননি। পরে নিজেরাই আদালতে গিয়ে মামলা করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে র‌্যাব ও একজনকে পুলিশ আজ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।