অধ্যাপক নুরুল মতিনের সাক্ষাৎকার

স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ গবেষণায় আগ্রহ হারালে দেশের বড় ক্ষতি হবে

রাজশাহীর তানোরের স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ প্রায় ২০০ জাতের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। এসব ধানের মধ্যে পাঁচটি বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক জাত হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। তানোরের গোল্লাপাড়া মাঠে তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর মাঠের ৬২ জাতের নতুন ধান এলোমেলো করে খেতের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। তানোরের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তির নির্দেশে এমনটা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুল মতিনের সঙ্গে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদকে কীভাবে চেনেন?

নুরুল মতিন: আমি ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে গবেষণাকাজ শুরু করি। পরের বছর ২০১১ সাল থেকে আমি নূর মোহাম্মদকে চিনি। বিভিন্ন সময় তিনি আমাদের কাছে আসেন। আমিও তাঁর কাছে যাই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: নূর মোহাম্মদের গবেষণার মাঠ নষ্ট হওয়ার কথা কখন প্রথম শোনেন?

নুরুল মতিন: প্রথম আলো থেকে আমি তাঁর গবেষণার মাঠ নষ্ট করার খবরটা জানতে পারি। আমি এই খবরে খুবই মর্মাহত হয়েছি। কারণ, এ ঘটনার কারণে নূর মোহাম্মদ যদি গবেষণায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে দেশের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাদের গবেষণা ও নূর মোহাম্মদের গবেষণার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?

নুরুল মতিন: আমরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণা করে থাকি। আর নূর মোহাম্মদ নিজে থেকে গবেষণা করেন। কাজ একই। আমিও গবেষক, তিনিও গবেষক। তাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক উপকৃত হই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সরকার গবেষণার জন্য আপনাদের কী ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে?

নুরুল মতিন: ধান নিয়ে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে থাকেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা গবেষণা করে থাকি। একটি জাত উদ্ভাবনের জন্য সরকার প্রায় ৭ থেকে ৯ লাখ টাকা ব্যয় করে থাকে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: নূর মোহাম্মদ কি সরকারের কাছ থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পান?

নুরুল মতিন: গবেষণার জন্য নূর মোহাম্মদকে কোনো টাকা দেওয়া হয় না। তিনি সব খরচ নিজে থেকে করেন। তাঁর মাঠে যে ৬২ জাতের ধান রয়েছে, এটা তিনি সম্পূর্ণ তাঁর নিজের খরচে উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর মাঠ নষ্ট করার জন্য যে ক্ষতি হয়েছে তা ব্যক্তিগতভাবে শুধু নূর মোহাম্মদকেই বহন করতে হচ্ছে। ফলে তাঁর ক্ষতি অনেক বেশি। সরকার থেকে কোনো টাকা না পেলেও গবেষণার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট পদক পেয়েছেন। এর মর্যাদা অনেক বেশি। স্থানীয় লোকজনকে তা বুঝতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এখন নূর মোহাম্মদের জন্য গবেষকদের কিছু করণীয় আছে?

নুরুল মতিন: আমাদের সবার উচিত নূর মোহাম্মদের পাশে থাকা। সরকারের উচিত তাঁর পাশে দাঁড়ানো।