ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশা মারার স্প্রে, কয়েল, মশারি ও বৈদ্যুতিক ব্যাটের (মসকিউটো র্যাকেট) চাহিদা বেড়েছে নগরবাসীর মধ্যে। বিশেষ করে যেসব পরিবারে শিশুসন্তান রয়েছে, তারা বেশি সতর্ক হচ্ছে।
মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নগরের মিরপুর, ফার্মগেট, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্প্রে–কয়েল বিক্রি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ক্রেতারা অবশ্য অভিযোগ করছেন, এই সুযোগে মশার কয়েল, ব্যাট ও মশারির দাম বাড়তি রাখছেন ব্যবসায়ীরা। নিরুপায় হয়ে ক্রেতাদের বেশি দামেই এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ব্র্যান্ডের মশা মারার স্প্রে ও কয়েলের দামই বাড়তি। আগে স্প্রের যেসব ক্যান ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১০০ টাকার নিচে দিতে চাচ্ছে না বিক্রেতারা। স্প্রের ক্যান প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে ভিআইপি স্টোরের মালিক মো. কবির হোসেন জানান, মশার স্প্রের বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। আগে মাসে ২০ থেকে ২৫ কার্টন (প্রতিটিতে ১২টি করে) স্প্রে বিক্রি হতো। চলতি জুলাইতে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০ কার্টন স্প্রে বিক্রি করেছেন। অ্যারোসল ক্যানের দাম আগের মতোই আছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৫০টি ব্র্যান্ডের কয়েল বাজারে আছে। পাইকারি বিক্রেতারা দাবি করছেন, তাঁরা কয়েলে বাড়তি দাম না রাখলেও মানুষের আতঙ্ক, প্রয়োজন আর চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন এলাকার খুচরা বিক্রেতা ও দোকানিরা। প্রায় সব কোম্পানির কয়েলই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চার–পাঁচ টাকার কয়েলের দাম হয়েছে ৮ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ টাকার নিম কয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়। বিভিন্ন নামের বুস্টার শ্রেণিভুক্ত কয়েলের দাম ১২ থেকে বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে।
ফার্মগেট তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা বলেন, আগে শুধু রাতে ঘুমানোর আগে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতেন। ডেঙ্গু–আতঙ্গে এখন দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন। মিরপুর টোলারবাগের ইসলাম হোসেন জানান, পরিবারের জন্য আগে প্রতি মাসে তিনি তিন প্যাকেট কয়েল কিনতেন ২৪০ টাকায়। এখন কয়েল চাহিদা আর দাম দুটোই বেড়েছে। মাসে এখন তাঁর ৬–৭ প্যাকেট কয়েল লাগে।
>মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির ব্যর্থতায় নগরবাসী ক্ষুব্ধ
নগরবাসী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন
মশার কয়েল, ব্যাট, মশারির বাড়তি দাম
নিরুপায় ক্রেতারা বেশি দামেই এসব পণ্য কিনছে
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন অবৈধ ও নামকাওয়াস্তে বহু কয়েল কারখানা গড়ে উঠেছে। তারা ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ করে কয়েল উৎপাদন করে। কয়েল উৎপাদনে কোন রাসায়নিক কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। এটা অখ্যাত ও অবৈধ কারখানা মানে না। উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ করা কয়েল মশা তাড়ায় ঠিকই, কিন্তু সেটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাবি করছেন, বিক্রি বাড়লেও পাইকারি বাজারে তাঁরা পণ্যের দাম বেশি রাখছেন না। পাইকারি বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির কয়েল প্রতি প্যাকেট ৬০ থেকে ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর বিভিন্ন কোম্পানির মশা মারার স্প্রে বোতলের পরিমাণ অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে চীনা মশার কয়েল বাওমা ও এআরএস মশার কয়েলের ডিলার মেসার্স নাসির স্টোরের মালিক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাওমা আগে এক মাসে তিনি প্রায় ৬০ কার্টন (প্রতি কার্টনে ৬০ প্যাকেট) ও এআরএস কয়েল প্রায় ৪০ কার্টন বিক্রি করতেন। এই মাসে দুই কোম্পানির কয়েলই দ্বিগুণের বেশি বিক্রি হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর বলেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে পণ্যের সরবরাহ অনেক বেশি। তাঁদের উৎপাদিত মশার স্প্রের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। ক্রেতারা বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও মশা মারতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ব্যাট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন তা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ঠেকেছে। হঠাৎ এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সালাম চৌধুরী বলেন, বাজেটে মশা মারার এই ব্যাটের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এগুলো এখনো দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয় না। বাইরে থেকে আসে। ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে।
মশারির দামও বেড়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মশারিপ্রতি ২০০–২৫০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। মশারির মান ও আকৃতিভেদে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।