যশোরে মিনারুল হত্যা মামলায় হাফিজুর রহমান নামের একজনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমান যশোর সদর উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের বাসিন্দা। সদর উপজেলার সালতা গ্রামের মিনারুল হত্যা মামলায় হাফিজুরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাফিজুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি বিভাগে কাজ করতেন। তাঁর ছোট ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন মিনারুল। মিনারুল দরজির কাজ শেখার জন্য হাফিজুরের ভাইয়ের কাছে যাতায়াত করতেন। এর মধ্যে হাফিজুরের প্রথম স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে মিনারুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। বিষয়টি একদিন হাফিজুর দেখে ফেলেন। ঘটনার দিন হাফিজুরের কাছে ক্ষমা চান মিনারুল। হাফিজুর বিষয়টি আর কাউকে জানাননি। এরপর হাফিজুর মনের দুঃখে সাবিনাকে তালাক দেন এবং পরে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু ওই দুঃসহ ঘটনা ভুলতে পারেননি হাফিজুর। পরে মিনারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাফিজুর। ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট রাতে প্রথমে মিনারুলের বাড়ির পাশের একটি বাগানে গিয়ে ধারালো অস্ত্র রেখে আসেন হাফিজুর। রাত ১০টার দিকে আবার হাফিজুর তাঁর বাড়িতে যান। এ সময় মিনারুলকে ইশারায় ডেকে বাড়ির পাশে ওই বাগানে নিয়ে যান হাফিজুর। এরপর ওই দা দিয়ে মিনারুলকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যান হাফিজুর।
এ ঘটনায় মিনারুলের বড় ভাই আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান। পিবিআই হাফিজুরকে ঘটনার ৯ দিনের মাথায় আটক করে। একই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করে। পরে ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২৫ আগস্ট আদালতে সোপর্দ করলে হাফিজুর হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিক তাঁর জবারবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে হাফিজুর কারাগারে বন্দী।
একই বছরের ৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার আসামির উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এম ইদ্রিস আলী বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের প্রতিশোধ নিতেই হাফিজুর মিনারুলকে হত্যা করেন। মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে হাফিজুরের উপস্থিতিতে আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।