হোটেলে সিট না পেয়ে রাজশাহী রেলস্টেশনে বসে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহী রেলস্টেশনে
হোটেলে সিট না পেয়ে রাজশাহী রেলস্টেশনে বসে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহী রেলস্টেশনে

স্টেশনে রাত জেগে সকালে পরীক্ষা

তাঁরা হোটেলে থাকার জায়গা পান না, খাবারের হোটেলে সময়মতো খাবার পান না। যানজটে নাকাল হয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসতে হয়।

ঘড়িতে রাত ১১টা ১৩ মিনিট। ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে যাত্রীর কোলাহলে স্টেশনে কান পাতা দায়। এর মধ্যেই বই নিয়ে বসে পড়ছেন হুমায়রা তাসনীম। পাশে বসে আছেন তাঁর মা-বাবা। তাঁদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। সকালেই হুমায়রার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।

শুধু হুমায়রা নন, তাঁর মতো অনেক শিক্ষার্থী গত সোমবার রেলস্টেশন ও ফুটপাতে রাত কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভর্তি পরীক্ষা দেন। অনেকে মসজিদেও আশ্রয় নেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় অন্যান্য জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের এমনই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তাঁরা হোটেলে থাকার জায়গা পান না, খাবারের হোটেলে সময়মতো খাবার পান না। যানজটে নাকাল হয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসতে হয়।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা বিভাগীয় আটটি শহরে পরীক্ষার কেন্দ্র করেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পারলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারবে না। তাঁরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান।

১ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। এই পরীক্ষার দিনে শহরে কোনো যানজট হয়নি। রিকশার ভাড়া বাড়েনি, খাবারের হোটেলগুলোতে কোনো ভিড় ছিল না।

পরীক্ষার্থী হুমায়রার বাবা হেদায়েতুল্লাহ জানান, তিনি আগেই শুনেছেন হোটেলে কক্ষ খালি পাওয়া যাচ্ছে না, খাবারের হোটেলে খাবার নেই। এ জন্য তিনি বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। মানবিক বিভাগে দুপুরের পালায় তাঁর মেয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে দুপুরের খাবার পেয়েছিলেন। বিকেলের ট্রেনে বাড়িতে রওনা দেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৭ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন। বাছাই করে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু ভিড় কমানোর জন্যই এই বিপুলসংখ৵ক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, জিপিএ–৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেন না। আবার যাঁদের জিপিএ–৫ নেই, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে তাঁদের অনেকে ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পান।

চাপ কমানোর জন্য এক ইউনিটের পরীক্ষা তিন পালায় নেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও শিক্ষার্থীদের আপত্তি রয়েছে। তাঁরা বলছেন, ক সেটে তাঁর কমন পড়েছে; কিন্তু খ সেটে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।

ঢাকা থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক সেলিম সরকার ছেলেকে নিয়ে রাজশাহী এসেছিলেন। যানবাহনের ঝামেলা না পোহানোর জন্য তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে এসেছিলেন। তিনি ও তাঁর ছেলের থাকার জায়গা হলেও গাড়িচালককে রাখার জায়গা পাচ্ছিলেন না। কোনো হোটেলেই কক্ষ খালি ছিল না। এ অবস্থায় পরিচিত সাংবাদিকদের সহায়তায় তিনি নওগাঁর এক সাংবাদিকের বাতিল করা একটি কক্ষে গাড়িচালকের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেলিম সরকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্র করা হলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করল আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন বসে থাকল, বুঝতে পারছেন না।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদেরও চিন্তাভাবনা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্র করার কথা তাঁরা ভাবছেন।