সিরাজগঞ্জে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে লাভের আশা করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সোনালি আঁশ আহরণ শেষ হয়েছে। জেলার হাটগুলোতে পাট বিক্রি শুরু হয়েছে। দামও ভালো। তাই সোনালি আঁশে স্বপ্ন বুনছেন যমুনাপারের চাষিরা।
পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় সিরাজগঞ্জে এবার পাট চাষের অনুকূল পরিবেশ ছিল। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, ভালো বীজের সহজলভ্যতা ও সারের সংকট না থাকায় ফলন হয়েছে ভালো। পাশাপাশি এখনো পর্যন্ত পাটের দামও ভালো। গত মৌসুমেও পাটের দাম ভালো ছিল। তবে পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন চাষিরা। এবার আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় ও বন্যার কারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়েননি চাষিরা। তাই বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে না চাষিদের। এসব কারণে সিরাজগঞ্জে এবার পাটচাষিরা আশাবাদী। তবে আশঙ্কাও রয়েছে। বাম্পার ফলনের পরও ন্যায্যমূল্য পাওয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা নেই। মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের (অসাধু চক্র) কারণে পাটের দাম যদি কমে যায় তবে চাষিদের ক্ষতি হবে।
কৃষকেরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সারা দেশে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। পাটের আবাদ করতে বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট উৎপাদন হয়েছে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ। তবে ধানের মতো বাজারে পাটের দাম কমে গেলে তাঁদের সীমাহীন ক্ষতি হবে। গত মৌসুমের শুরু থেকে পাটের দাম ভালো থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে মৌসুমের শেষের দিকে দাম তেমন বাড়েনি। তাই চাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য পেতে চলতি মৌসুমে দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
গত বুধবার সরেজমিনে জেলার কাজীপুর উপজেলায় যমুনা নদীবেষ্টিত নাটুয়ারপাড়া ভ্রাম্যমাণ পাটের হাটটিতে গিয়ে কথা হয় পাটচাষি, বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে। কাজীপুর উপজেলার দক্ষিণ রেহাইশড়িবেড় গ্রামের পাটচাষি গোলাম হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত পাটের দাম ভালো রয়েছে। এই দাম অব্যাহত থাকলে হয়তো কৃষকেরা এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন।
উপজেলার নাটুয়ারপাড়া এলাকার পাটচাষি আবু হাসেম বলেন, এবার তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গতবারের মতো এবারও ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
কাজীপুর যমুনার চরে নাটুয়ারপাড়ায় ভাসমান পাটের হাটে পাটের বেচাকেনা বেড়েই চলছে। এই উপজেলায় যমুনার চরে প্রচুর পাটের আবাদ হয়। যমুনা নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় নাটুয়ারপাড়ায় নৌকায় ভাসমান পাটের এই হাটটিতে চলছে এখন রমরমা ব্যবসা। স্থানীয় চাষিরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার পাটের মান যেমন ভালো হয়েছে, তেমন উৎপাদনও ভালো হয়েছে। আর এবার গত বছরের চেয়ে দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
আবদুল খালেক নামের আরেক চাষি বলেন, নৌকায় করে পাট আনা–নেওয়ার সুবিধা থাকায় এ অঞ্চলের চাষিরা পাট চাষে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় পাইকার কামাল ব্যাপারী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাটুয়ারপাড়া ভাসমান পাটের হাটটি ঘিরে নৌ ও সড়কপথের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তাই দিনে দিনে এখানে পাইকারদের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত ফসলের চাহিদাও বাড়ছে। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন তাঁরা। এবার পাটের গুণগত মান ভালো। দামও বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাবিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার আবাদ ভালো হয়েছে। এখন বাজারদর ঠিক থাকলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আর দাম ভালো পেলে আবারও সোনালি আঁশের সুদিন ফিরবে। ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হবে।