সোনালি আঁশে সোনালি স্বপ্ন

স্থানীয় উদ্যোক্তারাও পাটকল স্থাপনে ঝুঁকে পড়েছেন। গত কয়েক বছরে রংপুরে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল

পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ থেকে ৩২০০ টাকায়। ৩১ আগস্ট রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা হাটে

সোনালি আঁশ নিয়ে আবার সোনালি স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের পাটচাষি ও শিল্পোদ্যোক্তারা। ভালো ফলন ও পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এবার পাটের চাষ বাড়ছে। পাটজাত পণ্য উৎপাদনে এখানে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছর রংপুরে ৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। সেখান থেকে ২০ হাজার ৫০৯ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়েছে। গত বছর পাট চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে।

চলতি বছর রংপুরে পাটের ফলন ভালো হয়েছে, বেড়েছে পাটের দাম। কৃষকের মুখেও হাসি ফুটেছে। দুই বছর ধরেই পাটের আশাব্যঞ্জক দাম পেয়ে আসছেন কৃষকেরা। এ বছর দাম আরও বেড়েছে। প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। আর বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদন হয় ১০ মণ। সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা মণ ধরলে প্রতি বিঘার পাট বিক্রি করে আয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশি-বিদেশি বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারাও পাটকল স্থাপনে ঝুঁকছেন। গত কয়েক বছরে রংপুরে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল।

নর্থ বেঙ্গল জুট মিলের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয়ভাবে পাটকল গড়ে ওঠায় কৃষকেরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। তাদের পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলে উৎপাদিত পাটজাত পণ্যের বিক্রি বাড়বে।

রংপুরের পাটকলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত সুতলি যাচ্ছে বিভিন্ন হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে সুতলি দিয়ে কারুপণ্য তৈরি হচ্ছে। আবার পাটকলে উৎপাদিত বস্তা দেশের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। রংপুরের পাটপণ্য যাচ্ছে দেশের বাইরে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, দু–তিন বছর ধরে চাষিরা পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন। ফলে নতুন নতুন কৃষক পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারসহ খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে আবার সোনালি আঁশের সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন তিনি।