ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বাংলা নববর্ষ উৎসবে শোকের ছায়া ছিল। উৎসবে শামিল হওয়া মানুষ নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
নববর্ষ উদ্যাপনে উপজেলা প্রশাসন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু আয়োজন বাদ দেওয়া হয়েছে। সুন্দর ও সুখময় আগামীর প্রত্যাশায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে নয়টায় সোনাগাজী মো. ছাবের সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। পৌরশহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে অফিসার্স ক্লাব মাঠে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল পারভেজের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বক্তব্যে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তারা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কয়েকজন বলেন, তাঁরা উৎসবে অংশ নিয়েছেন, তবে উৎসবটা পরিপূর্ণ লাগছে না। যেদিন নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, সেদিন তাঁরা নববর্ষের উৎসবের চেয়েও বেশি আনন্দিত হবেন।
জানতে চাইলে ইউএনও মো. সোহেল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের কারণে এবার উপজেলা প্রশাসন নববর্ষ উৎসবের আয়োজন থেকে অনেকগুলো কর্মসূচি বাদ দিয়েছে। শুধু বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। নুসরাতকে হারিয়ে আজ সারা দেশ শোকাহত। এ শোককে শক্তিতে পরিণত করে সবাই নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচারের অপেক্ষায় আছেন।
৬ এপ্রিল ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।
এর আগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ‘নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।’