সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের অধ্যুষিত সোনাখাড়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের নিমগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কয়েকবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। একবার জেলার মধ্যেও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে। গত বছর এ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৭ শিক্ষার্থী। তাদের সবাই পাস করে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ শিক্ষার্থী। গত সপ্তাহে ঘোষিত প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল থেকে জানা গেছে, ১৪ শিক্ষার্থী মেধাবৃত্তি ও দুজন সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছে, যা উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ–সংকট চলছে।
শিক্ষক-অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৩০ সালে স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এলাকার গোকুল চন্দ্র মাহাতো বিদ্যালয়টির জন্য প্রায় পাঁচ বিঘা জমি দান করেন। তবে বর্তমানে বিদ্যালয়টির দখলে আছে মাত্র ১২ শতক জমি। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা কিছু জমি দখল করেছেন।
বিদ্যালয়টিতে পাঁচজন নারী শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন ১২ জন। বর্তমানে প্রাক্–প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রী ২০৮ জন ও ছাত্র ১৯৭ জন।
প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ তালুকদার বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলেও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে নির্মাণ করা আধা পাকা ভবনটি গত বছরের কালবৈশাখীর আঘাতে নষ্ট হয়। একাধিক ছাউনির টিন উড়ে যায়। সেটি এখনো মেরামত করা যায়নি। ফলে পরিত্যক্ত ভবনেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির দুটি করে চারটি শাখার পাঠদান চলছে। ঝড়-বৃষ্টির আভাস পেলেই শিক্ষার্থীদের অন্য ভবনের একটি কক্ষে জড়ো করা হয়। এ-সংকট মোচনের ব্যাপারে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থী বলে, ‘আসমানে মেঘের ভাব বুঝলেই স্যাররা আমাদের এখান থেকে নিয়ে যান। এ ছাড়া রোদের সময়ে ভাঙা চাল দিয়ে সূর্যের আলো ক্লাসে ঢুকে পড়ে। আবার বৃষ্টির সময়ে পানি পড়ে। লেখাপড়ায় খুব সমস্যা হয়।’
দুজন অভিভাবক বলেন, বছর পার হলেও বিদ্যালয়ের ঘরটির সংস্কার হলো না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রথম ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষের একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ কক্ষের একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ নেই। এ কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বসার সমস্যা হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনোই বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়নি বিদ্যালয়টি। এ পর্যন্ত ২০৪ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এ ছাড়া একবার জেলা পর্যায়ে ও একাধিকবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে এ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়টির জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদের সুপারিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।