সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকত থেকে ১ হাজার ৪৫০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রায় ৫০০ স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয় প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটিতে। ওশান কনজারভেন্সি নামের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কোস্টাল ক্লিনআপের কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিশ্বজুড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকতে ১১তম বারের মতো পরিচালিত হয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এ সময় সমুদ্রসৈকত থেকে ১ হাজার ৪৫০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে।
সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল পরিষ্কারকরণ বা কোস্টাল ক্লিনআপ কর্মসূচির আওতায় এ আয়োজন করে কোকাকোলা ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ। ওশান কনজারভেন্সির বাংলাদেশে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে কেওক্রাডং বাংলাদেশ।
ওশান কনজারভেন্সির বাংলাদেশ অঞ্চলের সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয়। এ সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর হাজারো পর্যটক এ দ্বীপে জড়ো হন। দ্বীপটির সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এর সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।’
সমুদ্রসৈকত পরিচ্ছন্ন করার কাজে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরাও। অংশগ্রহণ করেছিলেন সৈকতে আসা পর্যটকেরাও। পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছিল পরিচ্ছন্নতা অভিযানে।
মুনতাসির মামুন আরও বলেন, ‘কোস্টাল ক্লিনআপের আয়োজনে প্রতিবছরই অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, সবাই মিলে কাজ করলে শুধু সেন্ট মার্টিন নয়, পুরো পৃথিবীকেই আমরা আরও পরিষ্কার করে তুলতে পারব।’
আয়োজকদের মতে, এক দিনের পরিচ্ছন্নতায় সমুদ্রসৈকত বর্জ্যমুক্ত করা সম্ভব নয়, তবে এ উদ্যোগ স্থানীয় ও পর্যটকদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখবে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০১১ সালে সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকত থেকে ৪৮০কেজি বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়। বছর বছর বেড়েছে বর্জ্যের পরিমাণ। ২০২০ সালে এসে পরিষ্কারকৃত বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ১৪০ কেজিতে। সমুদ্রসৈকতে দিন দিন বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ার পেছনে পর্যটকদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিবছর হাজারো পর্যটক আমাদের এ দ্বীপে আসেন। আমাদের অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ পর্যটন আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু এ পর্যটনের কারণে আমাদের প্রধান যে সমস্যা হয়, তা হলো সমুদ্রসৈকতে নানা ধরনের বর্জ্য ও সামুদ্রিক বর্জ্য জমা হয়ে থাকে।’
পরিচ্ছন্ন পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কোকাকোলার বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১০ বছর ধরে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য ১১ বছর ধরে কেওক্রাডং বাংলাদেশের নিরলস প্রচেষ্টাকে কোকাকোলা বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। প্রতিবছর সামুদ্রিক বর্জ্যের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, আয়োজনে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যাও বেড়েছে। সবাই এগিয়ে এসে নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে শুধু সেন্ট মার্টিনই নয়, আমরা পরিষ্কার একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব।’
২০১১ সাল থেকে কোকাকোলা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কোস্টাল ক্লিনআপ উদ্যোগে সহায়তা করে আসছে। গত ১০ বছরে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশিসংখ্যক মানুষ একত্র হয়ে ১২ হাজার কেজির বেশি সামুদ্রিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন। এ পার্টনারশিপের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সমুদ্রগুলোকে দূষণমুক্ত করতে কাজ করছে কোকাকোলা।