সেতুর জন্য অপেক্ষা ছয় হাজার মানুষের

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে। প্রথম আলো
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে।  প্রথম আলো

এপারে সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রাম। ওপারে দুবলাগাড়ি হাট। মাঝখানে করতোয়া নদী। প্রতিদিন সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রামের মানুষকে নানা প্রয়োজনে ওপারে যেতে হয়। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য সেতু নেই। সুজাবাদ গ্রামের বাসিন্দারা এখানে সেতু নির্মাণের এক যুগ ধরে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। তাই স্থানীয় স্বেচ্ছাশ্রমে এখানে নির্মিত একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন। শুকনা মৌসুমে সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে এই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়নের সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রাম। করতোয়ায় সেতু না থাকায় কৃষকদের পণ্য কাছে হাটবাজারে নিতে এবং স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে বেশি সমস্যা হচ্ছে। এই বিষয়ে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এ গ্রামে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামের মানুষের নদী পারাপারের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। করতোয়া নদীর ওপর একটা পাকা সেতুর জন্য এক যুগ ধরে অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু সেতু আর হয়নি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যক্তিরা একটি বাঁশের সাঁকো স্থাপন করেন। বছরজুড়ে ঝুঁকি নিয়ে সেই বাঁশের সেতু দিয়ে নদী পারাপার হলেও প্রতিবছর বর্ষায় পানির স্রোতের সঙ্গে কচুরিপানা বেঁধে সাঁকোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। বর্ষার পরে গ্রামবাসীরা মিলে সাঁকোর ওই ভাঙা অংশ মেরামত করেন।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, সুজাবাদ বালাপাড়া গ্রামের মানুষ করতোয়া নদীর ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো সংস্কারের কাজে ব্যস্ত। কেউ বাঁশ কেটে খুঁটি বানাচ্ছেন, নদীর বুকে কেউ খুঁটি বসাচ্ছেন, কেউ খুঁটিতে লোহা দিয়ে পারাপারের জন্য বাঁশের পাটাতন তৈরি করছেন।

 গ্রামের কৃষক আফসার আলী (৭৫) প্রথম আলোকে বলেন, এই গ্রামের মানুষকে বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং খেতের সবজি বিক্রির জন্য প্রতিদিন নদীর ওপারে দুবলাগাড়ি হাটে যেতে হয়। গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনমাদলা-চাঁচাইতারা সংযুক্ত উচ্চবিদ্যালয়, দুবলাগাড়ি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। নদীর ওপারে ঈদগাহ মাঠ। করতোয়া নদীর ওপর সেতু না থাকায় পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদের। অন্য পথে যাতায়াত করতে গেলে শাজাহানপুর উপজেলা সদর কিংবা মাদলা চাচাইতারা হয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুবলাগাড়ি হাটে যেতে হয়। অথচ নদী পারাপার হয়ে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই দুবলাগাড়ি হাট।

গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একসময় শিক্ষার্থীরা কলার ভেলায় নদী পারাপার হতো। কৃষকেরা নদী সাঁতরে খেতের সবজি মাথায় করে ওপারে হাটে নিতেন। এই দুর্ভোগ দূর করার জন্য এলাকাবাসী ছয়-সাত বছর আগে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। প্রতিবছর এ সাঁকোটি তাঁরা নিজ উদ্যোগে সংস্কারও করেন। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকোই এখন ভরসা ছয় হাজার মানুষের। ভাঁড়ে করে বা সাইকেলে সবজির বস্তা তুলে বাঁশের সাঁকোয় নদী পারাপার হয়ে হাটে নেন কৃষকেরা। এতে ভোগান্তির শিকার হন তাঁরা। ওপারে তিনটি স্কুল-কলেজ। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। বর্ষায় নদীর স্রোতের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়।

মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করার মতো টাকা ইউপির তহবিলে নেই। সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভাতেও অনুরোধ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেখানে একটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফুয়ারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, সুজাবাদ গ্রামে পাকা সেতু দরকার—এমনটাও কেউ তাঁকে জানাননি। খোঁজখবর নিয়ে পাকা সেতুর প্রয়োজন হলে তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।