সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ বিষয়ে একজন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য পাউবো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। তবে বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে পাউবোর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতারা। তাঁরা টিআরএম পদ্ধতিতে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
ভবদহ অঞ্চলের ভুক্তভোগী মানুষ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি সেচে ভবদহ জলাবদ্ধতার সমাধান মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। তাঁরা জানান, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র উপায় হলো প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে দেওয়া। এলাকার নদ–নদীগুলো দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে জোয়ার–ভাটা চালু নিশ্চিত করা। এতে করে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নির্দিষ্ট বিলে অবক্ষেপণের ফলে বিল উঁচু হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভাটায় স্বচ্ছ পানির স্রোতে নাব্যতা ফিরে পাবে নদ–নদীগুলো। এই পদ্ধতির নাম টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বা জোয়ারধার। এ ছাড়া দর্শনায় মাথাভাঙ্গা-পদ্মার সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ পুনঃস্থাপিত করে ভৈরব নদ ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার করতে পারলে এই এলাকার নদ–নদীগুলো প্রবাহ ফিরে পাবে।
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এলাকার ৫২টি বিলের পানি ওঠা–নামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ–নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদ–নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। বিল উপচিয়ে পানি ঢুকে ইতিমধ্যে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার শতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এখন পানির নিচে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন এলাকার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
এই অবস্থায় গত ১৬ অক্টোবর ভবদহ পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার টিআরএম না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পাউবো যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন,‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ভবদহ পরিদর্শনে এসেছিলেন। এই মুহূর্তে পানি সরানোর জন্য আমরা তাঁকে পাম্পসেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। এ জন্য একজন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি সম্প্রতি ভবদহ অঞ্চল সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। কোন ধরনের সেচযন্ত্র বসানো হবে, এ ব্যাপারে তিনি প্রতিবেদন দেবেন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এই প্রকল্প গণবিরোধী বর্তমান পরিস্থিতিতে টিআরএম বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। নদ–নদীতে এখনো জোয়ার আসে, কিন্তু ভাটায় জোয়ারের পানি বের হতে পারছে না। এ জন্য নদী খননের কোনো প্রয়োজন নেই। নদ–নদীর কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার করতে প্রয়োজন হতে পারে। টিআরএম বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।