শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতি মো. রিপন আহমদ ও তাঁর স্ত্রী জোসনা বেগম আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নেমেছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। দোকান থেকে তাঁদের সর্বশেষ সঞ্চয়ের যে টাকা চুরি হয়েছিল, চার পুলিশ কর্মকর্তা মিলে সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে দোকান আবার চালু রাখতে প্রাথমিক সহায়তা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া ২০ হাজার টাকা ব্যবসার নতুন পুঁজি হিসেবে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। এ সময় মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জব্বার শাহীসহ সিলেটে কর্মরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মদিনা মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী জব্বার শাহী জানান, আগে সিলেটে কর্মরত ছিলেন এ রকম ৪ পুলিশ কর্মকর্তা মিলে ২০ হাজার টাকা দিয়ে রিপন-জোসনার দোকান চালু করার অনুরোধ করেন। এই চার পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নুরুল হুদা আশরাফী, মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খন্দকার আশফাকুজ্জামান, র্যাব সদর দপ্তরে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম সাজ্জাদুল আলম, নৌ-পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান সরকার।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া সহায়তা ছাড়াও সিলেট নগরীর চৌকিদেখির বাসিন্দা চৌধুরী শাহিনসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন কল করে রিপন-জোসনা দম্পতির ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন। প্রথম ধাপে তাঁদের ওই অর্থসহায়তা দেওয়ার পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান দুজনের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন।
রিপন-জোসনার হাতে অর্থসহায়তা দেওয়ার সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান তাঁদের প্রতিবন্ধী ভাতা না পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নেন। তিনি রিপন-জোসনার সামনে থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নেন। এরপর তিনি দুজনের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ব্যবসার পুঁজি হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা হাতে পেয়ে রিপন ও জোসনা প্রথম আলো ও অর্থসহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রিপন বলেন, ‘হাতটা একেবারে খালি আছিল। এই টেখা অনেক কাজ দিব। পুরা টেখাটা ব্যবসার মূল পুঁজির মতো আগলে রাখব।’
অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও না পাওয়ায় প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন দুজন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আশ্বাসে জোসনা বলেন, ‘এই ভাতাটা পাইলে আমরার কষ্ট-পেরেশানিটাও কমব।’
সিলেট নগরীর নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রিপন ও তাঁর স্ত্রী জোসনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুজনের উচ্চতা চার ফুটের কম। তবে কারও দয়ার পাত্র হিসেবে বসে থাকেননি তাঁরা। কঠোর পরিশ্রম করে জীবন চালাতেন। এ জন্য সবার কাছে কর্মজীবী দম্পতি হিসেবে পরিচিতি। কষ্টের জীবনসংগ্রামের প্রায় ১৮ বছর পর নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার পাশে নিহারিপাড়ার মুখে ছোট্ট একটি দোকান দেন তাঁরা।
‘রিপন স্টোর’ নামে দোকানটি লকডাউনের তিন মাস বন্ধ ছিল। তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সম্প্রতি দোকান খুলে সর্বশেষ সঞ্চয় দিয়ে নতুন মালপত্র তোলা হয়। যেদিন দোকানে নতুন মালপত্র তোলা হয়, সেদিন রাতেই চুরি হয়। দোকানে রাখা নগদ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা।
৫ জুলাই রাতে দোকানে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল। এরপর দোকান বন্ধ ছিল টানা দুই সপ্তাহ। গত সোমবার দোকান খুলে আবার চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রিপন-জোসনা। তাঁরা জানান, করোনাকালে দোকানে চুরির ঘটনাটি তাঁদের সঞ্চয়হীন করেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার মনোবলও ভেঙে গেছে। চোর ধরা না পড়ায় আবার চুরি হয় কি না, এই ভয়েই দিন কাটছিল তাঁদের।
আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়ানো হবে না তাঁদের?