উপজেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। প্রায় তিন হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর আরজা বেগমই (৫৫) চাষবাসের দেখভাল করেন। ৪৫ শতাংশ জমিতে কয়েক বছর ধরে আলু ও ভুট্টার আবাদ করে আসছিলেন তিনি, ফলন ভালো হয়নি। তার ওপর ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানও হয়েছে। পরিকল্পনা বদলে গত ডিসেম্বরে সেখানে ভোজ্যতেলের ফসল সূর্যমুখীর আবাদ করেন তিনি। ওই সূর্যমুখীখেতে ফুটেছে বাহারি ফুল। ফুল থেকে হচ্ছে দানাদার ফলনও। ফলনে হাসি ফুটেছে আরজা বেগমের মুখে। এ ফসলকে ঘিরেই সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন বুনছেন তিনি।
কম খরচ ও শ্রমে ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দামে ফসল বিক্রির আশা করছেন। ধারের টাকা শোধ করে সংসারে সচ্ছলতা আনারও স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখীতে।আরজা বেগম, কিষানি
আরজা বেগমের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর গ্রামে। স্বামী শুক্কুর কাজী সাত সন্তান রেখে মারা যান। সেই থেকে আরজা বেগমই সংসারের হাল ধরেছেন। তাঁর দেখাদেখি এবার গ্রামের আরও সাত-আটজন কৃষক সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। সবার ফলন ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হেক্টর জমিতে এবার বারি-৩ জাতের সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। এবার সূর্যমুখী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সূর্যমুখী ফসলের উৎপাদন খরচ কম। এতে রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম থাকে। সারও ছিটাতে হয় না তেমন। পরিচর্যার খরচও কম। তেলের বাজারদর ভালো। এসব কারণে এ বছর এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
সূর্যমুখী ফসলের উৎপাদন খরচ কম। এতে রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম থাকে। সারও ছিটাতে হয় না তেমন। পরিচর্যার খরচও কম। তেলের বাজারদর ভালো।মো. হেলাল উদ্দিন , উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাংলাদেশ
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, সূর্যমুখীর তেল প্রচুর ভিটামিনসমৃদ্ধ। কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকায় ভোজ্যতেলটি হৃদ্রোগ, হাঁপানি ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। প্রতি ১০০ কেজি সূর্যমুখী ফসলের দানা ভাঙালে ৪৪ কেজি তেল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় ৩০০–৩৫০ টাকায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে বাইশপুর গ্রামে দেখা যায়, সূর্যমুখীর ফুলে ফুলে রাঙা সেখানকার পরিবেশ। প্রধান সড়কের পাশে পরপর কয়েকটি সূর্যমুখীখেত। খেতের ফুল মজে দানাদার ফলন হতে শুরু করেছে। কৃষকেরা খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সেই সঙ্গে সূর্যমুখী ফুলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন ফুলপ্রেমীরা।
কিষানি আরজা বেগম বলেন, আলু ও ভুট্টা চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার টাকা ধার করে কৃষি কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনের পরামর্শে জমিতে সূর্যমুখী ফসলের চাষ করেছেন তিনি। কৃষি কার্যালয় থেকে পেয়েছেন বিনা মূল্যের সার ও বীজ। কম খরচ ও শ্রমে ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দামে ফসল বিক্রির আশা করছেন। ধারের টাকা শোধ করে সংসারে সচ্ছলতা আনারও স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখীতে।
ওই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন ও ফুল মিয়া বলেন, আরজা বেগমের দেখাদেখি তাঁরাও সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। তাঁদের খেতেও বাম্পার ফুল ফুটেছে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাভেল খান বলেন, সূর্যমুখী একটি লাভজনক ভোজ্যতেলের ফসল। তাঁর উপজেলায় এবার ফসলটির ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে এ ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।