ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে পড়ায় সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় ছাতকের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছাতক উপজেলার প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ৭০টি পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান জানান, ছাতক পৌর শহরসহ আটটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরের পুরোটাই প্লাবিত। ইতিমধ্যে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
ছাতক শহরের নোয়ারাই এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান, শহরের সবখানেই পানি। নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানি বাড়ছে। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ জানিয়েছেন, দোয়ারাবাজার সদর ও সুরমা ইউনিয়ন বেশি বন্যাকবলিত। যাঁদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে, তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে জেলার সদর, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর তীর উপচে শহরের মধ্যবাজার, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, সাহেববাড়ি, নবীনগর, বড়পাড়া, জলিলপুর, মল্লিকপুর এলাকায় পানি ঢুকেছে। একইভাবে ছাতক পৌর শহরে সোমবার রাতে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই পানি বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেসব উপজেলায় শুকনা খাবারের প্রয়োজন, সেখানে তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।