সুরভি উদ্যানের সৌরভ ছড়ানো সকাল

প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছেন দুই ব্যক্তি। এভাবে প্রতিদিনের সকালটা ভিন্নভাবে সৌরভ ছড়ায় রংপুরের কালেক্টরেট সুরভি উদ্যানে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

সকাল ছয়টা। পুব আকাশে এখনো সূর্য ওঠেনি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। একে একে ছুটে আসছেন নানা বয়সের নারী ও পুরুষ। কারও মুখে কথা নেই। কেউ একাকী হাঁটছেন। কেউবা শরীরচর্চা করছেন। আবার কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে ইয়োগা করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান। নগরের প্রধান সড়কের পাশে উদ্যানের সবুজ চত্বর। উদ্যানের ভেতর কংক্রিটের পাকা সড়ক। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে কিছু রাইড। সকালের নিরিবিলি পরিবেশে মুক্ত হাওয়ায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছেন মানুষজন। কেউ কেউ হাঁটছেন। কেউ শরীরচর্চা করছেন। এরই ফাঁকে কয়েকজনকে চাটাই বিছিয়ে ইয়োগা করতে দেখা গেল।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। সবার ভাষ্য, এত সুন্দর পরিবেশ কোথাও মিলবে না। সকালে কোনো গাড়ির উচ্চশব্দ নেই। নেই হর্নের শব্দও। কত মানুষ আসছে, যাচ্ছে। তাই তো শরীর সুস্থ রাখতে এভাবেই প্রতিদিন উদ্যানে ছুটে আসেন তাঁরা।

নগরের সাতগাড়া মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবু তালেব মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে এখানে আসেন। অনেকের মতো তিনিও হাঁটাচলা করেন। চাটাই বিছিয়ে ইয়োগাও করে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকেই যোগ দেন। সবাই নিজেদের উদ্যোগে এখানে ছুটে আসেন বলে তিনি জানান।

রংপুর নগরের সুরভি উদ্যানের ভোরের পরিবেশটা অন্যরকম। স্নিগ্ধ সকালে যোগাসনে বসেছেন কয়েকজন প্রাতর্ভ্রমণকারী

নগরের ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার বাসিন্দা দুলাল রায় পেশায় ব্যবসায়ী। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে আসেন তিনি। কখনো কখনো শরীরচর্চা করেন। শরীরের সুস্থতায় তাঁর এই ছুটে চলা। তবে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে বৃষ্টি নামলে দুলাল রায়ের মন খারাপ হয়। তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে সকালে উঠে হালকা শরীরচর্চা করছেন। এতে তাঁর শরীর–মন ভালো থাকে। ভালোভাবে ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারেন।

সুরভি উদ্যানে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে শান বাঁধানো বেঞ্চে বসে একটু জিরিয়ে নেন কেউ কেউ। স্নিগ্ধ সকালে সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা উদ্যানে কারই–না হাঁটতে ভালো লাগে।

প্রতিদিন সকালে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে আসেন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষক স্বপন কুমার রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দিন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করতে চায় না। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এভাবেই সকালটা শুরু করেন তিনি। এতে তাঁর মনটা প্রফুল্ল থাকে।

উদ্যানে হাঁটাচলা করতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করতে দেখা যায়। এতে একধরনের ভালো লাগা কাজ করে তাঁদের। সবার প্রাণোচ্ছল চেহারা। নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ।

সকালে হাঁটতে বের হয়েছে দুই কিশোর। তাদের মতো নানা বয়সের নারী ও পুরুষ সকালে উদ্যানে ছুটে আসেন।

হৈমন্তি রাণী রংপুর মেডিকেল কলেজে চাকরি করেন। শরীরের ব্যথার চিকিৎসায় ভারতেও গিয়েছিলেন তিনি। শেষমেশ ভালো থাকার জন্য তাঁকে প্রতিদিন সকালে হালকা শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘এভাবে শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আর সকালটা এভাবে শুরু করলে পুরোটা দিন বেশ ভালোই কাটে।’

অনেকের মতো প্রতিদিন উদ্যানে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই চলে আসেন নগরের পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষি কর্মকর্তা কামাক্কা চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বসে না থেকে সকালটা কাজে লাগাই। এতে শরীর সুস্থ থাকে।’

ভোরের সকালে হাঁটাচলা ও হালকা শরীরচর্চার কারণে শরীর ও মনের মধ্যে নিবিড় মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীর সুস্থ রাখতেই তাই প্রতিদিন মানুষের এই ছুটে চলা।