সুবর্ণজয়ন্তীতে জমকালো সাজে উত্তরা গণভবন

উত্তরা গণভবনের সবগুলো ভবনে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

ডালিয়া আর হলদে গাঁদা ফুলে ছেয়ে গেছে নাটোরের উত্তরা গণভবনের বাগান। সূর্য ডুবে গেলেই সেখানকার ভবনগুলো রঙিন বাতিতে ঝলমল করে উঠছে। উত্তরা গণভবনের ৫০তম জন্মদিন তথা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জমকালো এ আয়োজন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটোর সফরে এসে দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদকে ‘উত্তরা গণভবন’ নামকরণ করেন। তিনি তাঁর মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে গণভবনে সভাও করেছেন। এর পর থেকে উত্তরা গণভবন ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে পরিচিতি পায়। এখন পর্যন্ত বনলতা সেনের শহরের পুরোনো রাজপ্রাসাদটিই ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন।

দেশি-বিদেশি অসংখ্য ফুল ও ফলের গাছগাছড়া, সুদীর্ঘ লেক, পুকুর, ইতালিয়ান গার্ডেন ও নয়নাভিরাম একাধিক ভবন নিয়ে উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের বেড়ানোর জন্য বেশ পছন্দের জায়গা। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে গড়া ভবনগুলোতে লেগেছে নতুন রং। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গণভবন চত্বরের পথঘাট ঘষে–মেজে চকচকে মসৃণ করা হয়েছে।

সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে দুই পর্বে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং অন্যটি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণভবন চত্বরকে আরও আকর্ষণীয় করতে ২১ হাজার ফুলের চারা লাগানো হয়েছে।

দিনটির শুরুতে প্রথম ৫০ জন দর্শনার্থীকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। এ ছাড়া গণভবনসংলগ্ন বালিকা শিশু সদনে শিশুদের জন্য উন্নত খাবার বিতরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাহারি ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের বাগান

নাটোর জেলা সদর থেকে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার উত্তরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে দিঘাপতিয়া গ্রামে উত্তরা গণভবনের অবস্থান। পুরোনো ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, ১৮০২ সালে রাজা রামজীবন ৪২ একর জমির ওপর রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে প্রাসাদটি ধ্বংস হলে ১৮৯৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ শিল্পীদের সহায়তায় দিঘাপতিয়া রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় আজকের এই রাজপ্রাসাদটি নতুনভাবে নির্মাণ করেন।

প্রাসাদের নির্মাণশৈলী ও ভবনের কারুকার্যে মুঘল ও পাশ্চাত্য স্থাপত্যকলার মিশ্রণ দেখা যায়। রাজপ্রাসাদে মোট ভবন আছে ১২টি। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রধান প্রাসাদ ভবন, কুমার প্যালেস, প্রধান কাচারি ভবন, কর্তারানি বাড়ি (গ্র্যান্ড মাদার হাউস), রন্ধনশালা, প্রধান ফটক ইত্যাদি।

দিনের আলোতে উত্তরা গণভবনের প্রধান ফটক

প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও উত্তরা গণভবনের বিশেষ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের পর শেখ হাসিনা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময়ও এখানে মন্ত্রিপরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সমন্বয় সভাও এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। রাজসভার সভাকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত মূল প্রাসাদটি এখনো ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ভবনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ও মন্ত্রীদের বসবাসের কক্ষ।