মঙ্গলবার সকাল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফের কাজ শুরু করেছে বন ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা। সুন্দরবনের মরা ভোলা নদী তীর, শরণখোলা উপজেলা, বাগেরহাট
মঙ্গলবার সকাল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফের কাজ শুরু করেছে বন ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা। সুন্দরবনের মরা ভোলা নদী তীর, শরণখোলা উপজেলা, বাগেরহাট

সুন্দরবনে আগুন নিয়ন্ত্রণের দাবি, তবে এখনো দেখা যাচ্ছে বিক্ষিপ্ত ধোঁয়া

সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। আজ মঙ্গলবার দুপুরের একপশলা বৃষ্টির পর আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলছেন স্থানীয় ব্যক্তিরাও। তবে বনের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন এলাকায় এখনো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। বন বিভাগ সকাল থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করলেও আজ বেলা দুইটার পর ফায়ার সার্ভিসও এমন কথা জানায়। তবে এখনো বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া আছে। যেখানে ধোঁয়া বা আগুন দেখা যাচ্ছে, সেখানেই পানি ছিটানো হচ্ছে। আগুনে পাঁচ একরের বেশি বনভূমির গাছপালা ও লতাগুল্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।

গতকাল সোমবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ি এলাকার ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার আগুনে প্রায় চার শতাংশ বনভূমি পুড়ে যায়।

সুন্দরবনে গতকাল সোমবার লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

সুন্দরবন সুরক্ষায় দাতা সংস্থার অর্থায়নে ২০০৭ সালে বনসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠন করা হয় টাইগার রেসপন্স টিম। পরে ২০১৭ সাল থেকে সেই টিম ও বনসংলগ্ন গ্রামের অধিবাসীদের নিয়ে গঠন করা হয় কমিউনিটি টহল দল (সিপিসি)। বনের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় এমন কমিটি আছে পাঁচটি। এমন একটি দলের সভাপতি সুন্দরবনসংলগ্ন সোনাতলা গ্রামের খলিল জমাদ্দর। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে আমাদের টিমের সদস্য ছাড়াও গ্রামের কয়েক শ মানুষ আগুন নেভাতে কাজ করছেন। গতকাল ফায়ার সার্ভিস সেভাবে পানি ছিটাতে পারেনি। যেখানে আগুন লেগেছে, ওই এলাকা একটু উঁচু। বৃষ্টি ছাড়া জোয়ারের পানি ওঠে না। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মাটির ওপর শুকনা পাতার পুরু আস্তরণ, যার কারণে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। গতকাল থেকে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আজ বেলা ১১টা থেকে ফায়ার সার্ভিস পাশের মরা ভোলা নদী থেকে পাম্প করে নিয়ে পানি ছিটানো শুরু করেছে।

কমিউনিটি টহল দলের একটি এলাকার সভাপতি খলিল জমাদ্দর বলেন ‘বর্ষা আমাদের যে কাজটা করছে, সাত দিন পানি দিলেও তা হতো কি না, সন্দেহ। তবে এখনো কিছু কিছু এলাকায় ধোঁয়া আছে, জ্বলে উঠছে। ফায়ার সার্ভিস সেখানে পানি দিচ্ছে।’

আজ সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, বন বিভাগের আশপাশের সাতটি ফাঁড়ি ও স্টেশনের কর্মী, সিপিজি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক মো. গোলাম ছরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। আমরা পানি ছিটানো অব্যাহত রেখেছি। এর আগে অন্ধকার হয়ে এলে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম দিনের মতো কাজ বন্ধ রাখে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখেলা রেঞ্জের দাসের ভারানী এলাকায় আগুন লেগেছে

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আগুন লাগা এলাকার চারপাশজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর পাশাপাশি সিপিজি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। পাশাপাশি কিছু শ্রমিকও নিয়োগ করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করলেও কী পরিমাণ এলাকাজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে বা কতটুকু বনভূমির মধ্যে এখন আগুন আছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।