ফেসবুকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ কাউকে আটকও করেনি। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের যুবক ঝুমন দাস (২৮) ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁকে গত মঙ্গলবার রাতে আটক করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা গত সোমবার দিরাই উপজেলা শহরে একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। এর জেরে গতকাল বুধবার সকালে আশপাশের চারটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে যান। পরে সেখান থেকে শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই গ্রামে হামলা চালান। ঘটনার পর প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রামে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন আছে। তবে গ্রামবাসীর আতঙ্ক কাটেনি। হামলার সময় বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়া পুরুষেরা বাড়িতে ফিরলেও অনেক ঘরে নারী ও শিশুরা ফেরেনি।
দেখা গেছে, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ধারাইন নদের দক্ষিণ পাড়ে নোয়াগাঁও গ্রামের অবস্থান। গ্রামের তিনটি পাড়ায় দুই শতাধিক ঘর আছে। বেশির ভাগ ঘরই টিনের বেড়া ও টিনের চালার। ধারাইন নদের উত্তর দিকে বরাম হাওরের পারে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, চন্দ্রপুর ও সন্তোষপুর গ্রাম। ওই চার গ্রামের লোকজনকে নোয়াগাঁও যেতে হয় ধারাইন নদ পার হয়ে। এই নদের উত্তর পাড়ের চার গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক ওই গ্রামে গিয়ে হামলা চালান। তাদের মধ্যে কিশোর ও যুবকের সংখ্যা বেশি ছিল বলে স্থানীয়রা বলছেন।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, হামলাকারীরা ঘরের টাকাপয়সা নিয়ে গেছে। কয়েকটি ঘরের ভেতরে থাকা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। ঘরে থাকা লোকজনকে গালিগালাজ করলেও কাউকে মারধর করা হয়নি। গ্রামের কলেজছাত্র লিটন দাস বলেন, মাঝখানে ধারাইন নদ না থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো। নদের কারণেই সব লোক গ্রামে আসতে পারেননি, কিছুটা রক্ষা পাওয়া গেছে।
নোয়াগাঁওয়ে হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদারের বাড়ি। তাঁর ঘরটিও হামলার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার তাঁরা জানতে পারেন যে তাদের গ্রামের ছেলে ঝুমন দাস ফেসবুকে হেফাজত নেতাকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর রাতেই গ্রামবাসী ঝুমন দাসকে আটক করে পুলিশে দেন। বিষয়টি নিয়ে এরপর প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে ওই চার গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলোচনাও হয়। কিন্তু পরের দিন বুধবার সকালে কয়েক হাজার লোক সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ করে তাঁদের গ্রামে হামলা চালান। গ্রামের অন্তত ৯০টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়।
গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা চিন্তাও করতে পারিনি এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পুলিশ এখনো কাউকে আটক করেনি কেন, এটাই বুঝতে পারছি না।’
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক আজ বেলা ১১টার দিকে বলেন, পুলিশ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকজনকে আটকে অভিযান চালাচ্ছে। তবে থানায় এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন। নোয়াগাঁও ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আটক ঝুমন দাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে। সেটিও প্রক্রিয়াধীন।