ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তিনটি হাওরের বিভিন্ন স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। গতকাল শনিবার রাতে ঢলের পানির তোড়ে প্রথমে বাঁধ উপচে এবং পরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকে। এসব হাওরে এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি। আবার অনেক কৃষকের কাটা ধান রয়েছে হাওরে। তাই হাওরে পানি ঢোকায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, হাওরের বেশির ভাগ ধান কাটা হয়ে যাওয়ায় ফসলের খুব একটা ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল রাতে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের রহমতপুর ও বেহেলী গ্রামের পাশে ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে বৌলাই নদের পানি হালির হাওরে ঢুকতে শুরু করে। স্থানীয় কৃষকেরা খবর পেয়ে রাতেই সেখানে গিয়ে বাঁধ ঠেকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একইভাবে উপজেলার শনির হাওরের নিতাইপুর এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। পানি ঢুকছে শনির হাওরেও। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের রায়পুর এলাকায় আরেকটি মাটির বাঁধ প্রথমে উপচে এবং পড়ে সেটি ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বেহেলী গ্রামের কৃষক আজির উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এলাকার বৌলাই নদে অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়ে যায়। এলাকার লোকজন বাঁধ ঠেকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁধ ঠেকানো সম্ভব হয়নি, সেটি ভেঙে যায়। একইভাবে এলাকার নিতাইপুর এলাকায় আরেকটি বাঁধ ভেঙে শনির হাওরে পানি ঢুকে যায়। তবে শনির হাওরে ভেঙে যাওয়া বাঁধটি আজ রোববার সকাল থেকে মেরামতের চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিতাইপুর গ্রামের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, হাওরে যেভাবে পানি ঢুকছে, তাতে আর ধান কাটা যাবে না। হাওরে ধান কাটার চেয়ে এখন মানুষ বেশি চিন্তিত হাওরে রাখা কাটা ধান নিয়ে। হাওরে পানি ঢুকছে। মানুষ এখন সেই ধান নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।
বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অসীম চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘হাওরে এখন আর বেশি ধান নেই। এখন যে ধান কাটার বাকি আছে, সেগুলো উঁচু জমিতে। এখন বৃষ্টি নেই, আবহাওয়া ভালো, তাই লোকজন ধান কাটছেন। আশা করি, কৃষকের বেশি ক্ষতি হবে না। আমরা এলাকায় আছি। কৃষকদের উৎসাহিত করছি দ্রুত ধান কাটায়।’
একটি বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা পাল। তিনি জানান, তিনিও হাওরে আছেন। বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকেছে। একটি বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ে কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক স্বপন কুমার বর্মণ জানান, গতকাল রাতে হাওরের রায়পুর এলাকার বাঁধ উপচে প্রথমে রক্তি নদের পানি হাওরে ঢোকে। পরে এই বাঁধও ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে যায়। হাওরে পানি ঢোকায় লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও সমীর বিশ্বাস আজ বেলা ১১টায় জানান, হাওরের একটি বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে শুনে তাঁরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৯ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় এ পর্যন্ত হাওরে ৯৪ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক বশির আহমদ সরকার বলেছেন, সুনামগঞ্জে হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন যে ধান কাটার বাকি আছে, সেগুলো হাওরের উঁচু জমিতে আছে। এসব জমিতে কৃষকেরা দেরিতে ধান লাগান। যে কারণে এসব পাকতে সময় লাগে বেশি। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না। কৃষকেরা হাওরে ধান কাটছেন। তাই কোনো কোনো হাওরে পানি ঢুকলেও খুব এটা ক্ষতি হবে না।
কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সুনামগঞ্জ এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এখন পাহাড়ি ঢল নামছে। সে কারণে সুনামগঞ্জে নদী ও হাওরে প্রচুর পানি বেড়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া ভালো থাকায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে।