সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ও সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা পুরোটাই বন্যাকবলিত। ছাতক উপজেলায় ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০টি পরিবারের ৩০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলায় মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বুধবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৯৭ মিলিমিটার। যে কারণে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। এতে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
এবার গত ১৩ মে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এখন আবার দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মানুষজন বিপাকে পড়েছে।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাতক শহর থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সিলেট যাতায়াত করেন ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষজন। কিন্তু বন্যার পানিতে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের হাসনাবাদসহ কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ছাতক শহরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি আবার প্রবেশ করেছে।
একইভাবে জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর, বালিজুরীসহ আরও কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক ও সুনামগঞ্জ-সাচনা সড়কের কয়েকটি স্থান প্লাবিত হয়েছে। এই দুই সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
বুধবার সকালে ব্যাপক বৃষ্টির কারণে সুরমা নদীর তীর উপচে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নবীননগর, মধ্যবাজার, সাহেববাড়ী, বড়পাড়া, কালীপুর, জলিলপুর, হাসনবসত, সুলতানপুর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা জানান, তাঁর উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত। এর মধ্যে উপজেলার সদর ও সুরমা ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ এবং অন্যান্য ইউনিয়ন ৩০ শতাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি।
বিশ্বম্ভরপুর ইউএনও মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, তাঁর উপজেলায় ফতেপুর ও বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন বেশি প্লাবিত। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মানুষজন পানিবন্দী আছেন। তবে এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিতদের সহায়তার জন্য উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সহায়তার জন্য ২৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ২০ মেট্রিক টন করে। চারটি পৌরসভায় দেওয়া হয়েছে ২৫ মেট্রিক টন। এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, পানি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে।’