সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কোথাও কমছে, কোথাও বাড়ছে

সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের রামপুর এলাকার এই স্থানের পাকা সেতুটি গত বৃহস্পতিবার বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে পড়ে। এর পর থেকে জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে গতকাল শনিবার দিন ও রাতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে উজানের পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। এতে সুরমা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় কমেছে ১৮ সেন্টিমিটার। একই সঙ্গে জেলার সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পানি কমছে, তবে খুবই ধীরে।

অন্যদিকে, পানি বাড়ছে জেলার ভাটি এলাকা হিসেবে পরিচিত দিরাই ও শাল্লা উপজেলায়। উজানের পানি নেমেই এই দুই উপজেলার হাওরগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে এই দুই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, এই উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত তিন ফুট পানি বেড়েছে। বন্যার আশঙ্কায় উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপজেলার সুখলাইন গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত কুমার দাস জানান, ফয়জুল্লাহপুর এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি শাল্লায় ঢোকায় পানি বাড়ছে।

দিরাইয়ের ইউএনও মাহমুদুর রহমান বলেন, উজানে পানি কমায় দিরাই উপজেলায় পানির চাপ বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে দিরাই বন্যাকবলিত হতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজার আক্রান্ত বেশি। ১৪ মে থেকে এই দুই উপজেলার সব ইউনিয়নের মানুষ কমবেশি পানিবন্দী। ছাতক উপজেলার উত্তরের ইউনিয়নগুলোয় পানি কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে দক্ষিণের জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ, সৈয়দেরগাঁও ও সিংনচাপইড় ইউনিয়নে।

বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ থাকা ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলার সঙ্গে এখনো যান চলাচল বন্ধ আছে।

ছাতকের ইউএনও মামুনুর রহমান বলেন, উপজেলায় ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩০টি পরিবার আছে। পানি কমায় ছাতক-সিলেট সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৬০টি পরিবার।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভির আশরাফী চৌধুরী আজ রোববার সকালে বলেন, পানি কমছে, তবে সেটা খুবই ধীরে। যে কারণে মানুষে ভোগান্তি হচ্ছে বেশি।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি আছে। শহরের উত্তরে সুরমা নদী এবং দক্ষিণে দেখার হাওরের তীরবর্তী এলাকাগুলোয় পানি রয়েছে। বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, শান্তিবাগ, পশ্চিম নতুনপাড়া, কালীপুর, হাসনবসত, পশ্চিম হাজীপাড়া, হাসননগর ও সুলতানপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাসননগর ও সুলতানপুর এলাকার ৬৬টি পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। একইভাবে মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সেখানকার কিছু পরিবার রয়েছে। মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর আহমদ নূর জানান, পানি সামান্য কমেছে। তবে কিছু মানুষের বাড়িঘরে এখনো পানি আছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল নয়টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার। এখানে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৫ মিলিমিটার। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৪৬ মিলিমিটার।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় ১৬৫ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জেলা এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২০টি। এতে প্রায় ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, দুই দিন ধরে বৃষ্টি কম হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। সুরমা নদীর পানি কমছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।