সুইমিংপুল দুটির ভবিষ্যৎ কী?

অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুটি সুইমিংপুল। গতকাল বেলা তিনটায় পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কে। জুয়েল শীল
অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুটি সুইমিংপুল। গতকাল বেলা তিনটায় পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কে।  জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামের খেলার মাঠে নির্মিত সুইমিংপুল উদ্বোধন করা হয় ১০ আগস্ট। কিন্তু পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার জাতিসংঘ পার্কের দুটি সুইমিংপুল চার বছরেও চালু করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এখন তা একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

কবে নাগাদ সুইমিংপুলগুলো চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। সেখানে আদৌ সুইমিংপুলগুলো থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, জাতিসংঘ পার্ক ও সুইমিংপুল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করা উচিত।

চট্টগ্রাম নগরে সিটি করপোরেশন পরিচালিত তিনটি উন্মুক্ত উদ্যানের মধ্যে লালদীঘি চালু রয়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ পার্ক প্রায় পরিত্যক্ত এবং দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালে জাতিসংঘ পার্ককে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এলিট পার্ক লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠান সেখানে কমিউনিটি সেন্টার ও অতিথি হাউসসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এবং পাঁচলাইশ আবাসিক সমিতির বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।

এরপর পার্কের মালিকানা নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিলেও তাতে বাধা দেয় সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম জাতিসংঘ পার্কের এক একর জায়গার ওপর চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের জুনে শেষ হয়।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, জাতিসংঘ পার্কে নির্মিত দুটি সুইমিংপুলের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট ও প্রস্থে ৫০ ফুট। এর একটির গভীরতা আট ফুট, আরেকটির সাড়ে আট ফুট। জিমনেসিয়াম ভবনটি সাত হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। এর ভেতরে শরীরচর্চার কোনো সরঞ্জাম নেই।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জাতিসংঘ পার্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তায় নালার উপচে পড়া ময়লা পানি জমে আছে। এর উৎকট দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে হাঁটার কোনো পরিবেশ নেই। মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে পার্কটি। তবে সেখানে ঘুরে বেড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। অস্থায়ীভাবে কয়েকটি বসার আসন রয়েছে। আর সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়ামের অংশ আলাদাভাবে প্রাচীরঘেরা। এর ফটকে তালা দেওয়া।

যোগাযোগ করলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম কেন অব্যবহৃত পড়ে আছে তা তাঁর জানা নেই। কেননা যখন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। তবে শুনেছিলেন, ওই পার্ক দৃষ্টিনন্দন করার জন্য মেয়র একটি প্রকল্প নিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক এর বিরোধিতা করেন। যার কারণে ওই প্রকল্প আর বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর থেকে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ অ্যান্ড আরবানিজমকে’ চট্টগ্রাম নগরের তিনটি এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মো. সামসুদ্দোহা। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ পার্কও। তাদের কাছ থেকে নকশা পাওয়ার পর জাতিসংঘ পার্কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্য দুটি হচ্ছে লালদীঘি ও এর পার্ক ও মাঠ এবং আগ্রাবাদের ডেবার পাড় দিঘি।

এভাবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কোনোভাবে কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউটের (বিআইপি) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু ঈসা আনছারী।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উন্মুক্ত পরিসর মানুষের নাগরিক চাহিদা। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দড়ি টানাটানিতে জনগণ যদি নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে তা হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনক। এমনিতেই নগরে উন্মুক্ত স্থানের পরিমাণ কমছে। যতটুকু আছে তাও যদি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করে সবার জন্য ব্যবহার উপযোগী করা উচিত।