সীমান্ত বন্ধের পর বেনাপোল দিয়ে ফিরেছেন ২৫৬৪ জন, করোনা সংক্রমিত ১২

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর
ফাইল ছবি

ভারতের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ হাজার ৫৬৪ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে ১২ জন করোনায় সংক্রমিত হয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন।

স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত ১৪ দিনের জন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। আজ শনিবার দেশটির সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। এ সময় স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। তবে বাংলাদেশের যে নাগরিকেরা চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন এবং যাঁদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম, শুধু তাঁরাই যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষে বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, ওই তিন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশিদের প্রবেশের জন্য দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলা মিশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে এবং প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৬ এপ্রিল থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ হাজার ৫৬৪ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে ১২ জন করোনায় সংক্রমিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। আজ শনিবার ফিরেছেন ৮৫ জন। তাঁদের মধ্যে একজন করোনায় সংক্রমিত। আজ বাংলাদেশ থেকে ৪৩ জন ভারতীয় দেশে ফিরে গেছেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আজ শনিবার ভারত থেকে ৮৫ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন এবং বাংলাদেশ থেকে ৪৩ জন যাত্রী ভারতে গেছেন।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, যেসব যাত্রী করোনায় সংক্রমিত নন, তাঁদের নিজ খরচে যশোরের বেনাপোল, ঝিকরগাছা, যশোর শহর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরার আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যেসব যাত্রী করোনায় সংক্রমিত হয়ে দেশে ফিরেছেন, তাঁদের যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিন্ন দুটি পরীক্ষাগারে করোনার ভারতীয় ধরনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের রেড জোনে আজ ২৮ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ভারতফেরত ১৬ জন। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমিত ১২ জন রোগী রয়েছেন। আজ শনিবার করোনা সংক্রমিত হয়ে ভারত থেকে ফেরা এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

সূত্র জানায়, গত ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত ৭ জন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দেশে আসেন। এসব করোনা রোগীর মধ্যে ১৮ এপ্রিল ১ জন, ২৩ এপ্রিল ৫ জন ও ২৪ এপ্রিল ১ জন আসেন। তাঁদের জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। তাঁরা ওয়ার্ডে না গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ভারতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় পালানোর এ বিষয় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পরে তাঁদের ফিরিয়ে এনে হাসপাতালের রেড জোনে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার একটি রেড জোন রয়েছে। এই রেড জোনে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের ভর্তি রাখা হয়। করোনায় সংক্রমিত ভারতফেরত এবং স্থানীয় রোগীরা একই ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিন্ন দুটি পরীক্ষাগারে করোনার ভারতীয় ধরনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে। গত ২৭ এপ্রিল ভারতফেরত আটজনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে গত ২৯ এপ্রিল পুনরায় তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত ৬ মে ভারত থেকে আসা অপর ১৬ জনের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার একটি রেড জোন রয়েছে। শয্যাগুলোর একটি থেকে অপরটির ব্যবধান দুই থেকে তিন ফুট। এই রেড জোনে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের ভর্তি রাখা হয়। করোনায় সংক্রমিত ভারতফেরত এবং স্থানীয় রোগীরা একই ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। ওয়ানটাইম (একবার ব্যবহারযোগ্য) প্যাকেটে করে প্রতিদিন তিন বেলা তাঁদের খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সুরক্ষা পোশাক পরিহিত নার্সরা তাঁদের মুখে খাওয়ার ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিয়ে আসেন। তাঁদের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে একজন কনসালট্যান্ট রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। জরুরি ক্ষেত্রে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুঠোফোনে কনসালট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার রায় বলেন, ভারতফেরত আট করোনা রোগীর আলাদা দুটি পরীক্ষাগারে করোনা ও করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন পরীক্ষা করা হয়েছে। ফল ভালো ছিল। এ ছাড়া ভারত থেকে আসা অপর ১৬ জনের পরীক্ষার জন্য গত ৬ মে নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দফায় করোনার নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ২ জন করোনা পজিটিভ ও ১২ জনের নেগেটিভ এসেছে। বাকি দুজনের ফলাফল আসেনি। তাঁদের করোনা ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন শনাক্তের ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনো প্রতিবেদন আসেনি।