দোল পূর্ণিমায় হোলি উৎসবের মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শিবচতুর্দশী মেলা। মেলা শুরুর পর থেকে গত ১৮ দিনে মেলায় আসা ছোটবড় ৮০০টি দোকানে ২০ কোটি টাকার বেশি বিক্রিবাট্টা হয়েছে বলে জানিয়েছে সীতাকুণ্ড মেলা কমিটি। এর মধ্যে প্রথম তিন দিনে বেচাবিক্রি হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ওই তিন দিনে দেশ-বিদেশ থেকে সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলায় এসেছিলেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
মেলা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, শিবচতুর্দশী মেলা শুরু হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। প্রথম তিন দিনে মানুষ এসেছে প্রায় ১০ লাখ। দোকানপাট বসেছে মন্দির সড়কের স্কুলগেট থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত। এ ছাড়া পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টেও দোকান বসেছিল। এতে দোকানের সংখ্যা ছিল ৮০০। এরপর মেলার দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়িয়েছে মন্দির সড়কের এক কিলোমিটারে। দোকানপাট কমে আড়াই শর মতো হয়। আবার মেলার শেষের দিকে সড়কের দুই কিলোমিটার এলাকায় দোকানপাট বসে। দোকানের সংখ্যা বেড়ে চার শর মতো হয়।
কয়েক বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ বেচাবিক্রি হয়েছে বলে দাবি মেলা কমিটির। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দোকান বসেছে এবার।
মেলায় খেলনার দোকানদার মনির হোসেন বলেন, তাঁর পতেঙ্গা সি–বিচে দোকান আছে। শিবচতুর্দশীর মেলায় প্রতিবছর তিনি সীতাকুণ্ডে আসেন। তুলনামূলক এ বছর বিক্রি বেশি হয়েছে। তিন দিনে তাঁর ১৫ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে।
বাঁশি নিয়ে কুমিল্লার হোমনা থেকে মেলায় আসেন যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে তাঁদের কোম্পানি সীতাকুণ্ডে মেলায় দোকান দেয়। মেলার প্রথম তিন দিনে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশুদের বাঁশি। একেকটি বাঁশি বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ১০০ টাকায়।
মিষ্টিজাতীয় খাবার প্যারা, বাতাসা নিয়ে চাঁদপুর থেকে এসেছেন বাবুল সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ বছর ধরে মেলায় আসেন তাঁরা। ১৫ দিন ব্যবসা করেন। দিনে গড়ে ৫০ হাজার টাকার বেশি বেচাবিক্রি হয় তাঁদের। তবে বেশি বিক্রি করেন মেলার প্রথম তিন দিন ও শেষ দুই দিন।
শেষ দিন শুক্রবার মেলায় কেনাকাটা করছিলেন রুমা ঘোষ। তিনি রান্নাঘরের তৈজসপত্র কিনছিলেন। তিনি বলেন, মেলার শেষ দিন কিছুটা সস্তায় জিনিস পাওয়া যায়। তাই হোলি উৎসব শেষ করে কেনাকাটা করে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।
শেষ দিনে কম দামে জিনিস বিক্রি প্রসঙ্গে খেলনার দোকানি জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে অনেক লাভে মালামাল বিক্রি করেছেন। এখন আর ধরে রেখে লাভ নেই। তাই প্রায় কেনা দামে জিনিস বিক্রি করেন দোকানিরা।
মেলা কমিটির সভাপতি সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ডের শিবচতুর্দশী মেলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়েছে। মেলাটির ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। মেলাকে ঘিরে সীতাকুণ্ডে অর্থের যে প্রবাহ হয়েছে, তা স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। এর পরিসর বাড়িয়ে কীভাবে এটাকে আন্তর্জাতিক মেলায় রূপ দেওয়া যায়, সেটা ভাবছেন তাঁরা।