চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের এক মাস পরও লরিচালক মো. ইয়াসিনের কোনো সন্ধান পায়নি তাঁর পরিবার।
সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজে না পেয়ে ইয়াসিনের বাবা বদিউল আলম ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়ে এসেছেন। এরপর শুধু অপেক্ষা প্রহর বেড়েছে, তবে ইয়াসিনের কোনো সন্ধান মেলেনি।
ইয়াসিন বিএম কনটেইনার ডিপোর লরিচালক ছিলেন। গত ৫ জুন রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে ইয়াসিনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘটনার এক দিন পরই তাঁর বাবা বদিউল আলম ছেলের খোঁজ পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। দুই দিন চট্টগ্রামে অবস্থানের পর তিনি খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন। তখন থেকে ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে তাঁদের দিন কাটছে।
ইয়াসিনের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে ইয়াসিন তৃতীয়।
ইয়াসিনের বাবা বদিউল আলম বলেন, ১০ বছর আগে ইয়াসিন বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়িচালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রায় দুই বছর আগে থেকে ইয়াসিন পদোন্নতি পেয়ে ডিপোর লরিচালক হন। বিস্ফোরণের সময় তিনি ডিপোতেই ছিলেন।
বিস্ফোরণের পরদিন থেকে ইয়াসিনের বাড়িতে স্বজনেরা কান্নাকাটি শুরু করেন। ইয়াসিনের মা বিবি জহুরা বেগমের কান্না এখনো থামেনি। চলছে শোকের মাতম। ছেলের শোকে তিনি এখন পাগলপ্রায়। কাউকে দেখলেই তিনি বলে ওঠেন, ‘তোমাদের কাছে টাকাপয়সা বা অন্য কোনো কিছুই চাই না। আমার বুকের ধনরে আনি দাও।’
নিখোঁজ ইয়াসিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ডিপোতে আগুন লাগার পর ইয়াসিন ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে লাইভ করেছিলেন। ওই ভিডিও দেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ইয়াছিনকে কল দিয়েছিলেন। ইয়াসিন তখন বলেছিলেন, আগুনের ভয়াবহতা অনেক। তাঁর জন্য বাড়ির লোকজনকে দোয়া করতে বলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরই লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইয়াসিনের মুঠোফোনের পর্দা অন্ধকার হয়ে যায়। এর পর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ নেই।
বদিউল আলম বলেন, চার-পাঁচজন লোক মিলে ডিপোর ভেতর থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। কিন্তু ইয়াসিনকে খুঁজে পাননি। এখন তাঁকে জীবিত পাওয়ার আসা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের চাওয়া, অন্তত ছেলের লাশ যদি খুঁজে পাওয়া যায়।