অক্টোবরে সি–ট্রাকটি বিকল হলে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। এখনও মেরামত হয়নি। এতে ভোগান্তির শেষ নেই মনপুরাবাসীর।
ছয় মাস হলো ভোলার মনপুরা–তজুমদ্দিন নৌপথে সি-ট্রাক নেই। ‘এসটি শেখ কামাল’ নামে সি–ট্রাকটি মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। আর ফেরেনি। এ পথে সি–ট্রাকই একমাত্র বৈধ নৌযান। ফলে ভোগান্তির শেষ নেই দ্বীপ উপজেলা মনপুরার দেড় লক্ষাধিক মানুষের। অনন্যোপায় হয়ে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে অবৈধ ট্রলার বা স্পিডবোটে যাতায়াতের কাজ সারছে মনপুরাবাসী।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আওতাধীন ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর এ আট মাস সাগর মোহনার নদীগুলো সাগরের মতো বিপজ্জনক জলসীমানায় পরিণত হয়। এ সময় সি-ট্রাক বা সিসার্ভে সনদধারী লঞ্চ ছাড়া অন্য নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয়। কিন্তু যাত্রীরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে, নয়তো স্পিডবোটে চলাচল করে। সমস্যাটি সমাধানে সোমবার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
ভোগান্তির বিষয়টি উল্লেখ করে মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজামউদ্দিন বলেন, অনিরাপদ যাতায়াতের কারণে মনপুরা থেকে বের হওয়ার নাম করলে অনেকে উত্তাল ঢেউয়ের আশঙ্কায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ছোট ট্রলারে যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের মালবাহী ট্রলার ডুবে যাচ্ছে। উপজেলার জরুরি রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক রোগী নৌযানেই মারা যাচ্ছে। নিরাপদ নৌযানের অভাবে উপজেলার দেড় লাখ মানুষ মনপুরায় বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আওতাধীন ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান জানালেন, তজুমদ্দিন-মনপুরা নৌপথে চলা সি-ট্রাক শেখ কামালের ২০২২ সালে দরপত্র হয়েছে। যে ইজারাদার সি–ট্রাকটি ইজারা পেয়েছেন, তিনি টিসিকে জামানত, ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেননি। তাঁরা জাহাজও বুঝে নেননি। ফলে এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা দ্রুত এ নৌপথে একটি সচল সি–ট্রাক দেবেন।
এই নৌপথের সি–ট্রাকটি ১৫–২০ বছর ধরে ইজারা নিচ্ছে ইয়ানুর এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের মতো ২০২১-২২ সালেও তিনি সি–ট্রাকের ইজারা নিয়েছেন। বার্ষিক ৭৫ হাজার টাকায়। ২০২১ সালে বলতে গেলে সারা বছর সি–ট্রাকটি ঘাটে বিকল পড়েছিল। সর্বশেষ অক্টোবরে বিকল হলে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। আজও সংস্কার হয়নি। ২০২২ সালে আরও বেশি মূল্যে ইজারা নিতে হয়েছে, কিন্তু এখনো সি–ট্রাক বুঝে পাননি।
অর্ধশতাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নামও মনপুরা। সড়কপথে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপটির কোনো সংযোগ নেই। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা দ্বীপটির চারপাশেই মেঘনা। মনপুরা থেকে ভোলা সদর প্রায় ৮০ কিলোমিটার। জলপথে বৈধভাবে মনপুরা থেকে মূল ভূখণ্ডে আসার দুটি পথ। একটি হাতিয়া–মনপুরা-ঢাকা নৌপথ, আরেকটি মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথ।
ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া নৌপথে চারটি লঞ্চ চলে। তবে এই পথের প্রধান অসুবিধা হলো অতিরিক্ত সময়। এই পথে মূল ভূখণ্ডে কোনো কাজ নিয়ে গিয়ে ওই দিন দ্বীপে আর ফিরে আসা যায় না। কম করেও দুই দিন সময় লাগে। আর মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে ঋতুভেদে কিছুদিন চলে লঞ্চ, কিছুদিন সি-ট্রাক। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই এগুলো বিকল থাকে।
তাহলে মনপুরার লোকজন এখন মূল ভূখণ্ডে আসা-যাওয়া করছে কী করে? জানতে চাইলে যাত্রীরা বলেন, ট্রলার আর স্পিডবোটই তাঁদের ভরসা। অথচ এই নৌপথে দুটি যানই অবৈধ। এগুলোই এখন মূল ভূখণ্ডে যাওয়া-আসার প্রধান বাহন। মনপুরাবাসী নিরুপায় হয়ে এসব অবৈধ যান ব্যবহার করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, পুরোনো সি–ট্রাকটি বারবার বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তাই একটি নতুন সি–ট্রাক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সি–ট্রাকের অভাবে তিনি ও তাঁর দপ্তরের কর্মকর্তাসহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।