সিলেটে টানা কয়েক দিন ধরে যানজটে নাকাল নগরবাসী। সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া, উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাটের বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি ও পাড়া-মহল্লার অপ্রশস্ত রাস্তায় যানজটের মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন নগরের মানুষজন। আজ বুধবার নগরের একাধিক এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোজার মধ্যে তীব্র দাবদাহে যানজটে পড়ে ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, রমজান মাস হওয়ায় বিকেলের আগেই মানুষ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করতে তৎপর। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় নগরে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট, লালদিঘির পাড়সহ কিছু এলাকার ফুটপাতও বেদখলে আছে। এতে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট হচ্ছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের যানজটের প্রভাব পাড়া-মহল্লাতে গিয়েও ঠেকছে।
সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, নগরে মূলত পাঁচ কারণে যানজট হচ্ছে। সেগুলো হলো অবৈধ যানবাহন, অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ফুটপাত বেদখল ও যত্রতত্র পার্কিং। এ ছাড়া নগরে রিকশাসহ অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
দুপুর ১২টার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ভার্তখলা এলাকার গৃহিণী জ্যোৎস্না আক্তারের (৪৮) সঙ্গে কথা হয়। তিনি কলেজপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে রিকশায় বাসা থেকে বেরিয়েছেন। জ্যোৎস্না জানান, জিন্দাবাজারে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করার জন্য বেরিয়েছেন। তাঁর বাসা থেকে গন্তব্যের দূরত্ব সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটের। কিন্তু প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে যানজটে পড়ে এক জায়গায় আটকা পড়েছেন।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুরমা মার্কেট, লামাবাজার, কাজলশাহ, মদিনা মার্কেট, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, ধোপাদিঘির পাড়, শিবগঞ্জ, উপশহর, মহাজনপট্টি, কালীঘাট, সিটি পয়েন্ট, কদমতলী ও ভার্তখলা এলাকায় তীব্র যানজটে যান চলাচল স্থবির হয়ে আছে। সকাল থেকেই থেমে থেমে এসব এলাকায় যানজট ছিল। এতে নগরবাসীকে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আম্বরখানা এলাকায় রিকশায় এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। কাছে যেতেই দেখা গেল, তিনি দরদর করে ঘামছেন। বাদামবাগিচা এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন (৪৭) নামের ওই ব্যক্তি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু সবজি ও মাছ-মাংস কিনে বাসায় ফিরছেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে তাঁর অসহ্য লাগছে। গত কয়েক দিন ধরে নগরে যানজট পরিস্থিতি বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, নগরে মূলত পাঁচ কারণে যানজট হচ্ছে। সেগুলো হলো অবৈধ যানবাহন, অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ফুটপাত বেদখল ও যত্রতত্র পার্কিং। এ ছাড়া নগরে রিকশাসহ অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
যানজটে নাকাল নগরবাসী বলছেন, শহরের অপ্রশস্ত রাস্তাগুলো বড় করা গেলে ও অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করতে পারলে যানজট থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দিনে কিংবা রাতে যেন ফুটপাত দখল করে হকাররা ব্যবসা করতে না পারেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন সিটি করপোরেশনের ফেলে রাখা উন্নয়নযজ্ঞের কারণেও যানজট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারদের নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হয়। যানজট নিরসনের স্বার্থে ফুটপাতে যেন কোনো হকার ব্যবসা করতে না পারেন, সে জন্যও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদেও সিটি করপোরেশন নিয়মিত অভিযান চালায়। রমজান মাসে নগরবাসীর সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করতে এসব অভিযান ও তদারকি বাড়ানো হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। রমজানকে ঘিরে চলতি মাস থেকে ট্রাফিক পুলিশ দুটি বিশেষ দল গঠন করেছে। কোনো এলাকায় যানজটের তীব্রতা দেখা দিলে ওই দলের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে যানজট নিরসন করেন। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এ বিশেষ সেবা দিচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ট্রাফিক পুলিশ বরাবরের মতোই কাজ করছে।