সিলেট বিভাগে চলতি বছর এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত হয়েছেন আটজন। নতুন এসব রোগীদের মধ্যে সাতজনই অভিবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য। এর আগে ২০২০ সালে ১২ জন, ২০১৯ সালে ১৩ জন ও ২০১৮ সালে ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার আলো সোসাইটির মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট বিভাগে ২০০৩ সাল থেকে এইচআইভি পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের পরিসংখ্যানের কাজ শুরু করে আশার আলো সোসাইটি। ২০০৩ সাল থেকে গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটির পরীক্ষায় বিভাগের ৪ জেলায় মোট ৮৮৭ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে।
আশার আলো সোসাইটি জানিয়েছে, চলতি বছর সিলেট বিভাগের ১৮৩ জনকে পরীক্ষা করে ৮ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও দুজন নারী। ছয়জন পুরুষের মধ্যে পাঁচজনই মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মী। এ ছাড়া আক্রান্ত দুজন নারীর স্বামী এর আগে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি, জুন, আগস্ট ও অক্টোবর মাসে একজন করে মোট চারজন এবং সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে দুজন করে আরও চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে চলতি বছর পুরোনো রোগীদের মধ্যে আটজন মারা গেছেন।
এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৮৮৭ জনের মধ্যে সিলেটে ৫৮২ জন, মৌলভীবাজারে ১৫৯ জন, সুনামগঞ্জে ১১০ জন ও হবিগঞ্জে ৩৬ জন আছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪৭ জন পুরুষ, ২৭৫ জন নারী ও ৪ জন হিজড়া। এর বাইরে শিশু আছে আরও ৬১ জন।
চলতি বছর সিলেট বিভাগের ১৮৩ জনকে পরীক্ষা করে ৮ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও দুজন নারী। ছয়জন পুরুষের মধ্যে পাঁচজনই মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মী।
এদিকে বিভাগে এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মোট ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে সর্বোচ্চ ২৬৬ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে ৭৩ জন, সুনামগঞ্জে ৪৫ জন ও হবিগঞ্জে ১২ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৯৭ জন পুরুষ, ৭৯ জন নারী ও ১ জন হিজড়া আছেন। এর বাইরে আরও ১৯ জন শিশু এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এদিকে ২০১৭ সালের মে মাস থেকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষার জন্য এআরটি সেন্টার চালু হয়েছে। এরপর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই পরীক্ষাগারে ১৩৬ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
আশার আলো সোসাইটি সিলেটের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রীবাস গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অভিবাসী কর্মীদের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের মাধ্যমেই স্ত্রী ও সন্তানেরা এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে চিহ্নিত করা যায়নি এমন আরও অনেক এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি সিলেট বিভাগে আছেন বলে মনে করেন তিনি।
সিলেটে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অভিবাসী কর্মীদের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের মাধ্যমেই স্ত্রী ও সন্তানেরা এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।শ্রীবাস গোস্বামী, ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আশার আলো সোসাইটি সিলেট
কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের প্রচুরসংখ্যক শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। এর মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন। তাঁরা দেশে ফিরে পরীক্ষার পর এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারছেন। অনেকে আবার জেনেও আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন। ফলে তাঁদের মাধ্যমে স্ত্রী ও সন্তানেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায় প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এইডসে আক্রান্ত প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রোগ নির্মূল করতে শুধু সচেতনতা নয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকাও জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে হেনস্তা কিংবা অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।