তথ্য সূত্র: বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তার কার্যালয়
তথ্য সূত্র: বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তার কার্যালয়

সিন্ডিকেটের কারণে লাভ করতে পাচ্ছেন না মাছচাষিরা

তিন-চার বছর ধরে ভারতে মাছ রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু ‘সিন্ডিকেটের’ কারণে প্রান্তিক চাষিরা তেমন লাভ করতে পারছেন না।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মিঠাপানির মাছের আমদানি ও রপ্তানি—দুটিই বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতে মিঠাপানির মাছের বেশি চাহিদা রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। তবে মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের আয়ের ওপর এর প্রভাব কম। এর কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের মাছচাষিরা।

গত তিন এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ কেজি মাছ রপ্তানি হয়েছে। এর বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। একই সময়ে ভারত থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের মাছ আমদানি হয়েছে। সেখানকার বাজারেও মাছের দাম কম বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, বেনাপোল স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতে পাবদা ও কার্পজাতীয় মাছের চাহিদা বেশি। এতে পাবদা, ট্যাংরা, ভেটকি, পাঙাশ, গজালসহ মিঠাপানির মাছ বেশি রপ্তানি হয়। এর মধ্যে দেশে সবচেয়ে বেশি পাবদা মাছ উৎপাদিত হয় যশোরে।

রপ্তানি যখন প্রতিবছরই বাড়ছে, তখন ব্যবসায়ীরা কতটা লাভবান হচ্ছেন, তা জানতে কথা হয় জেলার চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলার দুজন জেলের সঙ্গে। এই দুই উপজেলায় পাবদার উৎপাদনের পরিমাণ বেশি।

করোনায় বাজারে দাম কম। যখন যে বাজার মূল্য, সে অনুযায়ী চাষিদের কাছে থেকে মাছ কেনা হয়।
আবদুল কুদ্দুস, মৎস্য রপ্তানিকারক

চৌগাছার লস্করপুর গ্রামের চাষি আবুল কাসেমের ৭৫০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের আছে। এর মধ্যে ১৫০ বিঘা জমিতে তিনি অন্যান্য মাছের সঙ্গে পাবদার চাষ করেন। কাসেম বলেন, গত বছর তিনি প্রতি মণ পাবদা বিক্রি করেছিলেন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়। এ বছর সেই মাছ বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায়। দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারকদের মাছের সিন্ডিকেটকে।

এই সিন্ডিকেটের ব্যাখ্যা দিলেন ঝিকরগাছার রঘুনাথনগর গ্রামের চাষি আহমেদ ফারুক। তাঁর অভিযোগ, রপ্তানিকারকেরাই এই সিন্ডিকেট তৈরি করেন। একচেটিয়া বাজারব্যবস্থা তৈরি করে তাঁরাই চাষিদের কম দামের মাছ বিক্রি করতে বাধ্য করেন। আহমেদ ফারুক ৩৬ বিঘা জমিতে পাবদার চাষ করেন। এ বছর তিনি সর্বনিম্ন সাড়ে ৭ হাজার এবং সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার টাকা মণ দরে পাবদা বিক্রি করেছেন। ফারুক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পাবদার চাষ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।

জেলার রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম শার্শার বাগআঁচড়ার আবদুল কুদ্দুস। সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনায় বাজারে দাম কম। যখন যে বাজার মূল্য, সে অনুযায়ী চাষিদের কাছে থেকে মাছ কেনা হয়।

ভারত থেকে যেসব মাছ আমদানি হচ্ছে, সেগুলো এখন দেশেই ব্যাপক আকারে চাষ হচ্ছে। ফলে আমদানির তেমন প্রয়োজন নেই। চাষিদের কথা বিবেচনা করে আমদানি বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
আনিছুর রহমান, যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা

চাষি পর্যায় থেকে এবার চোখ রাখা যাক গত তিন বছরের মোট আমদানি-রপ্তানির দিকে। বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য সঙ্গনিরোধ (ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন) কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে ৮১ লাখ ৬৭ হাজার, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮৭ লাখ ৯ হাজার ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের মাছ রপ্তানি হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৩৭ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ১১ হাজার ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলার।

মৎস্য বিভাগ ও মাছচাষিরা বলছেন, দেশে এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এখন আর ভারত থেকে মাছ আমদানির প্রয়োজন নেই। কিন্তু এরপরেও আমদানি থেমে নেই। আমদানি বন্ধ হলে দেশের চাষিরা লাভবান হবেন।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ভারত থেকে যেসব মাছ আমদানি হচ্ছে, সেগুলো এখন দেশেই ব্যাপক আকারে চাষ হচ্ছে। ফলে আমদানির তেমন প্রয়োজন নেই। চাষিদের কথা বিবেচনা করে আমদানি বন্ধ রাখা প্রয়োজন।