সিনহার সঙ্গী সিফাতের জামিন মঞ্জুর

সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাত। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাত। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতের জামিন হয়েছে। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ আদেশ দেন।

গতকাল রোববার দুপুরে জামিন পান সিনহার দলে থাকা আরেক সদস্য শিপ্রা দেবনাথ। সিফাত ও শিপ্রা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। গত ৩ জুলাই সিনহার সঙ্গে শিপ্রা, সিফাতসহ তিনজন কক্সবাজার যান ভ্রমণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ধারণ করতে।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিষবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেই থেকে তিনি কক্সবাজার কারাগারে বন্দী আছেন।

আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে সিফাতের জামিন আবেদন করেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পুলিশের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন করে র‌্যাবের হাতে ন্যাস্ত করার আবেদনও মঞ্জুর করেন আদালত।

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় হয় টেকনাফ থানায়। এই মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও গুলিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলার আসামি করা হয় সিফাতকে। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় আসামি করা হয় শিপ্রা দেবনাথকে।

৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন বাদী হয়ে একই আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত, এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই আদালত র‌্যাবের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে সাত দিনের রিমান্ড এবং অপর চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এসআই লিটনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এই নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই।

র‌্যাব গত শনি ও গতকাল রোববার কারাফটকে চার আসামির জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছে। আজ ওসি প্রদীপসহ অপর এক আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে আসামিরা জেলা কারাগারে আছেন।

আদালত প্রাঙ্গণে সিফাতের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমরা পুলিশের সাজানো মামলা থেকে সিফাতের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ পাঁচ হাজার টাকা জিম্মায় সিফাতকে জামিন দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র‌্যাবকে ন্যস্ত করেছেন। সিনহা হত্যা মামলার একমাত্র সাক্ষী সিফাতকে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আইনি কোনো সমস্যা নেই।’


সিফাতের মামা মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিফাত কারাগারে আছে। আজকের মধ্যে কাগজপত্র জমা দিয়ে তাকে মুক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।’