আজ থেকে ঠিক ১২ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাত। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় কিছু জেলা।
সিডর নামের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে ঢোকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদ দিয়ে। পাশের উপজেলা মোংলার চিলা গ্রাম। সেদিন বিকেলে শত শত মানুষের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে চিলা গ্রামের সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সাথী সরকার ও তাঁর স্বামী জর্জি সরকার। সূর্যোদয়ের আগে সাথী সরকারের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক শিশু। ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার মধ্যে নতুন প্রাণের বারতা নিয়ে এল যে শিশু, সাথী দম্পতি তার নাম রাখলেন সিডর। সিডর সরকার। ঘূর্ণিঝড়ের ১২ বছর পূর্তির সঙ্গে সিডরের বয়স এখন ১২।
১২ বছর ধরে চলছে সিডরের পরিবারের টিকে থাকার যুদ্ধ। উপকূলীয় আর দশটি পরিবারের মতো অভাব পিছু ছাড়েনি সিডরের পরিবারের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সিডরের বাবা জর্জি সরকারের একমাত্র অবলম্বন মাত্র তিন কাঠা জায়গায় টিনের ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে সিডরের দাদি রিভা সরকারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সিডরের বাবা সাগরে গিয়েছেন মাছ ধরতে। সিডরের মা একমাত্র সন্তানকে ছেড়ে ঢাকায় একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। সিডরও এখন মোংলায় থাকে না। খুলনার দাকোপ উপজেলার হরিণটানা গ্রামের একটি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছ। সে ভর্তি হয়েছে হোম অব লাভ নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এবার সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সামনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, তাই জন্মদিন উপলক্ষেও বাড়ি আসার অনুমতি মেলেনি। তিন মাস পরপর সিডরের দেখা করার অনুমতি মেলে।
পশুর নদ পার হয়ে লাউডোপ ইউনিয়নের হরিণটানা গ্রামে হোম অব লাভ বোর্ডিং স্কুলে গিয়ে পরিচয় দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মাইকেল হালদার ভেতরে নিয়ে যান। তিনি জানান, তাঁর বাড়িও সিডরদের বাড়ির পাশে। সেখানের পরিবেশ ভালো না। অনেকটা অনাথ শিশুর মতো বেড়ে উঠছে। তাই মা–বাবার সম্মতিতে লাভ ইয়োর নেইবার নামের সংস্থার গড়ে তোলা এই বোর্ডিং হাউসে তাকে নিয়ে আসেন। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে শিশুদের পড়াশোনা ও সব মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নেওয়া হয়। বর্তমানে এখানে ২৭ জন শিশু আছে।