মহানগরের সিআরবিতে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এটি হলে নগরের প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও সৌন্দর্য হানি হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিরোধিতা করা হয়।
সিটি করপোরেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআরবিতে রেলওয়ের ৫০ শয্যার বক্ষব্যাধি ও ৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল রয়েছে। এই হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে না তুলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ধরনের পাঁয়তারা মেনে নেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গত বছর সিআরবি এলাকায় বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল ও সংলগ্ন খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের ছয় একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রকল্পের চুক্তি সই ও অনুমোদন হয়। বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ছয় একর জমিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ১২ বছর। ইতিমধ্যে রেলওয়েকে আট কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ৫০ বছর পর হাসপাতালটি রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সিটি করপোরেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, চট্টগ্রাম নগর মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী সিআরবির ভূপ্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানকে কোনোভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যাবে না। ঐতিহাসিক স্থানের আশপাশে যেসব নতুন স্থাপনা করা হয়েছে, তা অপসারণ করে পর্যটনবান্ধব করতে হবে। আশপাশের বস্তি ও কাঁচা ঘরকে স্থানান্তর করতে হবে। বিদ্যমান হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই সম্প্রসারণ করা যাবে না। আর কোনো বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থাপনা করা যাবে না।
সিটি করপোরেশনের এ সভায় বক্তারা বলেন, হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র মূল্যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের সুলভে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ছিল অন্যতম শর্ত। কিন্তু এই হাসপাতালগুলো ধনিক শ্রেণির চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাই সিআরবির মতো নান্দনিক স্থানে এ ধরনের হাসপাতাল বানিয়ে স্বাস্থ্যসেবার নামে লুণ্ঠনবৃত্তির আরেকটি স্থাপনা করতে চায়।
সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশের সভাপতিত্বে ও সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য মো. মোবারক আলী, মো. শফিকুল ইসলাম, রুমকি সেনগুপ্ত ও ফেরদৌসী আকবর, নগর–পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর।
এদিকে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে বিকেলে ‘নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’–এর ব্যানারে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়। চট্টগ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তা রুখে দেবে বলে সেখান থেকে বলা হয়। সমাবেশে বক্তারা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য ডিসি হিল পুনরুদ্ধার করার ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু হয়।