বৃহস্পতিবার সকালে আবারও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে উত্তরা গণভবনে প্রবেশের প্রধান ফটক। করোনা মহামারিতে এর আগে প্রথম দফায় নয় মাস বন্ধ থাকার পর সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে আবার সাড়ে চার মাস বন্ধ ছিল প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন।
কাকতালীয়ভাবে গণভবনের চিড়িয়াখানায় গতকাল বুধবার রাতে জন্ম নিয়েছে সন্ধ্যা ও মালতী নামের দুটি হরিণশাবক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দর্শনার্থীদের জন্য সদ্য জন্ম নেওয়া হরিণশাবক দুটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
পূর্বঘোষণা থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার কিছু আগেই নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সহকর্মীদের নিয়ে উত্তরা গণভবনের প্রবেশপথে দর্শনার্থীদের বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গণভবনের প্রধান ফটকে থাকা ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট হাতে নানা বয়সের দর্শনার্থীরা প্রবেশপথে জড়ো হয়। প্রত্যেকের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত হয়ে জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। পরে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা উত্তরা গণভবনের বিশাল চত্বর ঘুরে দেখেন। দীর্ঘদিন পর দর্শনীয় স্থানে ঢুকে দর্শনার্থীরাও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন, তা নিয়ে তাঁদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
গণভবনের চিড়িয়াখানায় গতকাল রাতে জন্ম নিয়েছে সন্ধ্যা ও মালতী নামের দুটি হরিণশাবক। তাই এই শুভক্ষণে সবার আগে নতুন এই অতিথিদের দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। গতকাল পর্যন্ত এখানকার চিড়িয়াখানায় হরিণের সংখ্যা ছিল ১২। আজ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪। অনেক দিন পর অনেক মানুষের আনাগোনা দেখে হরিণের দল ভয়ভীতি ভুলে কাছে ছুটে আসে। সবার সামনে দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসক দুই হরিণশাবকের নাম রাখেন সন্ধ্যা ও মালতী। তাদের বাবা শ্যামল ও মা শ্যামাও এখানে শুরু থেকে আছে। সদ্য জন্ম নেওয়া শাবক দুটির মনেও আনন্দের কমতি ছিল না। তারা সারাক্ষণ মায়ের আশপাশে ছোটাছুটি করছিল।
গণভবন খুলে দেওয়ার দিনটি স্মরণীয় করতে নাটোরের ঔষধি গ্রামের জয়নাল কবিরাজ গণভবনের এক কোণে গড়ে তুলেছেন ঔষধি গাছগাছড়ার বাগান। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তিনি সেখানে ১০০ প্রজাতির ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছেন। জয়নাল কবিরাজ জানান, এখন থেকে দর্শনার্থীরা গণভবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ঔষধি গাছগাছড়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
উত্তরা গণভবনে আজ প্রথম প্রবেশ করেছেন নীলিমা ইয়াসমিন নামের এক কলেজছাত্রী। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এত দিন কোথাও যেতে পারিনি। আজ গণভবন খুলে দেওয়ার কথা শুনেই এখানে চলে আসছি। এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে।’ তাঁর সঙ্গে এসেছেন তাঁর বান্ধবী তাবাসসুম। তিনি জানালেন, দুই দফা বন্ধ থাকার পর আজ প্রথম দিন প্রথম গণভবনে ঢুকতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, উত্তরা গণভবন খোলা থাকলে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি বাবদ প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উত্তরা গণভবন রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ২৫ জন কর্মীর বেতন–ভাতা পরিশোধ করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শর্তসাপেক্ষে ভবনটি খুলে দেওয়া হলো। দর্শনার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘুরতে পারবেন।