রংপুরের বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় ইরি-বোরো ধানখেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা হচ্ছে। এই দুই উপজেলার ৭৭টি কৃষি ব্লকে ওই আলোক ফাঁদ পাতা হচ্ছে। এতে পোকা দমনসহ ধানখেতে ক্ষতিকর কী ধরনের পোকা রয়েছে, তা শনাক্ত করা যাচ্ছে। এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বদরগঞ্জে এবং পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় পীরগঞ্জে ওই আলোক ফাঁদ পাতার কার্যক্রমের সূচনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওই দুই উপজেলা কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবায়দুর রহমান ও নাসিরুল আলম। ধান পাকার আগ পর্যন্ত খেতে ওই আলোক ফাঁদ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন ওই দুই কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বদরগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় জানান, কৃষকেরা ক্ষতিকর পোকা দমনে ধানখেতে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এতে পরিবেশদূষণসহ ধান উৎপাদনে কৃষকের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হয়। এ কারণে পোকা দমনে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কোনো খরচ নেই। আলোক ফাঁদ তৈরি করতে ধানখেতের পাশে উঁচু করে বৈদ্যুতিক বাল্ব বা হ্যাজাক লাইট ঝুলিয়ে বা অন্য কোনো আলোর উৎস তৈরি করে তার নিচে ডিটারজেন্টমিশ্রিত পানির পাত্র রাখতে হয়। পোকা আলো দ্বারা আকৃষ্ট হয়। আলো দেখে পোকা ধানখেতে পাতা ফাঁদে ছুটে আসে। এরপর পানির পাত্রে পড়ে আর উড়তে পারে না। মারা যায়। তখন সহজেই শনাক্ত করা যায়, ধানখেতে কোনো ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি রয়েছে কি না।
পীরগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুল আলম বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে টাকা খরচ করে ধানখেতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এর পরিবর্তে বিনা খরচে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এতে পরিবেশদূষণও হচ্ছে না।
পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের খেজমতপুর গ্রামের কৃষক ইয়াছিন আলী (৪৫) বলেন, ‘আগোত টাকা খরচ করিয়া কীটনাশক কিনি ধানের পোকা মারচেনো। অ্যালা আর টাকা খরচ কইরবার নাগে না। আলো জলেয়া পোকা মারোচি।’
বদরগঞ্জের কিসমত ঘাটাবিল গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম (৫৬) বলেন, ‘ধানবাড়িত (ধানখেতে) পোকা ধরচে কি না সেইটা না বুঝিয়া টাকা খরচ করি বিষ স্প্রে করচেনো। অ্যালা আর সেইটা কইরবার নাগে না। আলোর ফানোতে ধরা পড়ে ধানবাড়িত পোকা আছে কি না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পীরগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ও পৌরসভায় ১৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আলোক ফাঁদ পাতানো হয়েছে ৪৬টি ব্লকে।
বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৯৭৫ হেক্টরে। ধান উৎপাদিত হবে অন্তত ১ লাখ মেট্রিক টন। এই উপজেলায় আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে ৩১ ব্লকে।