সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

হামলার সময় দুই পক্ষের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই পক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১৭টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে এ সংঘর্ষ চলে।

সংঘর্ষে অন্তত পাঁচটি গ্রামের দেড় হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন রাজীব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতুব্বর, ফিরোজ মাতুব্বর, আহম্মদ মাতুব্বর ও জালাল শেখ। এর মধ্যে রাজীব মোল্লা ও ইস্রাফিল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রাজীব ও ইস্রাফিলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজীব আটঘর ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের চুন্ন মোল্লার ছেলে ও ইস্রাফিল একই গ্রামের কাসেম শেখের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খানের সঙ্গে গত ইউপি নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বকুল মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

মলয় বোস হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান। অন্যদিকে বকুল মাতুব্বর মলয় বোস হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এদিকে বকুল মাতুব্বর সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওদুদ মাতুব্বরের অনুসারী। ওদুদ মাতুব্বরের শ্বশুর ইমামুল হোসেনও মলয় বোস হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। বৃহত্তর নগরকান্দা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন ইমামুল।

গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চলে

গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেপ্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহিদুল ইসলাম খানের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের জালাল শেখ ও রবিউল শেখের সঙ্গে বকুল মাতুব্বরের অনুসারী খবির শেখের কথা-কাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।

গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চলে। এ সময় সেনাটি, গোবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বালিয়া গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয় বলে জানা গেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বকুল মাতুব্বরের সমর্থক আমিনুল মাতুব্বর বলেন, ‘সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতুব্বর তার দলনেতা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে বলে কয়েক গ্রাম থেকে শত শত লোক এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার দলের নিজাম শেখের ৩টি ও সাত্তার মাতুব্বরের ২টি ঘর ভাঙচুর করেছে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল।’

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সমর্থক সামাদ মাতুব্বর বলেন, কথা-কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতুব্বর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক লোকজন নিয়ে তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এতে তাঁর সমর্থক মোহাম্মাদ ফকিরের ২টি, কুদ্দুস মাতুব্বরের ৩টি, মানিক মাতুব্বরের ৩টি, জালাল শেখের ২টি ও শুকুর মশালচীর ২টি ঘরে প্রতিপক্ষের লোকজন ভাঙচুর করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, এক বছরে মধ্যে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা সালথায় হয়নি। সংঘর্ষে কয়েক গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। সংঘর্ষের খবর পেয়ে থানা ও জেলা পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে শটগান থেকে ১৫টি গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলাকার পরিবেশ এখন স্বাভাবিক আছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তিনি শুনেছেন। ওই দুই তরুণের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যদি সত্যি এ ঘটনা ঘটে, তাহলে প্রমাণিত হয় ওই দুই তরুণ সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।