সাভারের নয়ারহাট এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চে ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা
সাভারের নয়ারহাট এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চে ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা

সাভারে ছয় দাবিতে নিটারের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ছয় দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকার সাভারে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে ভবনে অধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ ওই ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান অবসরে যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। এরপর অবসরে গিয়ে তিনি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ওই পদে থেকে মিজানুর রহমান প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। অধ্যক্ষ থাকলেও তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কারণে বিভিন্ন সময় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টা পদ বিলুপ্ত ও সব ক্ষমতার অধিকারী অধ্যক্ষকে করাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দিনব্যাপী এ বিক্ষোভের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেলোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তিনি অসুস্থ হয় পড়েন। পরে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলে তাঁকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

শিক্ষার্থী আশিক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাস রুটিন দেওয়া হয়নি। বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ নেই। ইনিস্টিটিউট আবাসিক হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসকও নেই। আমরা আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ বর্তমান উপদেষ্টা মিজানুর রহমান প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে এখনো তাঁর প্রভাব বজায় রেখেছেন। তাঁর কারণেই কোনো দাবিই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, সর্বোচ্চ প্রশাসক হবেন অধ্যক্ষ এবং উপদেষ্টা বা এমন সব পদের বিলুপ্তি, মিজানুর রহমান কোন পদাধিকারবলে উপদেষ্টা হয়েছেন, সে–সংক্রান্ত বিধিমালার নথি প্রকাশ ও তাঁর সবল অনিয়মের কারণ দর্শানোর নোটিশসহ নিটার সংশ্লিষ্ট সব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান, রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিনের বিরুদ্ধে আগে দুর্নীতির অভিযোগ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের স্বীকারোক্তি দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় কারণ দর্শানোসহ তাঁর পদত্যাগ, বিক্ষোভের সময় আন্দোলনে সংহতি জানানো এক শিক্ষকের গায়ে হাত তোলায় সবার সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করে শিক্ষক হাসান শিবলির পদত্যাগ, রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সব প্রশাসনিক পদে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যক্তিদের নিয়োগ, নতুন শিক্ষক নিয়োগে নিটারের সাবেক শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি।

এ বিষয়ে নিটারের সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান উপদেষ্টা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই। শিক্ষার্থীরা কী নিয়ে আন্দোলন করছেন, কেন করছেন আমি কিছুই জানি না। গভর্নিং বডির সদস্যরা আছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আবদুল মুত্তালিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খুবই খারাপ একটি সময় পার করছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এ পরিস্থিতির সমাধান করা হবে।’