গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সাতটিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন চারটিতে। দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দুর্বলতার কারণে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে বলে মনে করছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ষষ্ঠ ধাপে গতকাল সোমবার ইভিএমে সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। অবশিষ্ট তিনটি ইউপির পৌরসভা–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। এগুলো হচ্ছে বনগ্রাম, জামালপুর ও কামারপাড়া।
নৌকা প্রতীক নিয়ে একমাত্র ধাপেরহাট ইউপিতে জয় পেয়েছেন শফিকুল কবির। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় পার্টি থেকে নলডাঙ্গায় ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফুর বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে ইদিলপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য (বহিষ্কৃত) বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান সরকার, ভাতগ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য মাহফুজার রহমান, দামোদরপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, খোর্দ্দকোমরপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য সৈয়দ মনঞ্জুরুল ইসলাম জয়ী হন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদপুরে আবদুল্যাহ আল মামুন ও রসুলপুরে রবিউল ইসলাম নির্বাচিত হন।
এদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় খোর্দ্দকোমরপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার জামানত হারিয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮৪৫ ভোট পেয়েছেন। এই ইউপিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ মনঞ্জুরুল ইসলাম ২ হাজার ১৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। দামোদরপুরে আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল ১ হাজার ৬২৯ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এখানে ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ৭ হাজার ৮৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে দলের পরাজয় নিয়ে নেতা–কর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন ভালো হয়নি। তাই দলের পরাজয় ঘটে। আরেক নেতা বলেন, দলের অনেক নেতা–কর্মী আত্মীয়তার সুবাদে গোপনে বিদ্রোহী প্রাথীর পক্ষে কাজ করেন। ফলে সাতটি ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় ঘটে। উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, দলের প্রার্থী মনোনয়ন সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগি হয়েছে। ফলে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটে।
ইউপি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান গাইবান্ধা–৩ আসনের (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) সাংসদ উম্মে কুলসুমকে দুষলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে ভুল ছিল। তৃণমূল থেকে যেসব প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল, স্থানীয় সাংসদ উম্মে কুলসুমের হস্তক্ষেপে সেসব নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ উম্মে কুলসুম বলেন, ‘তৃণমূল নাম পাঠিয়েছে, কেন্দ্র মনোনয়ন দিয়েছে, আমি হস্তক্ষেপ করব কেন। এ ছাড়া প্রার্থী মনোনয়নে হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।’
দামোদরপুরের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি দলের ত্যাগী নেতা। কিন্তু দল তাঁকে মূল্যায়ন করেনি। তাই জনগণের অনুরোধে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। তবে দলের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।