দুই কৃষকের বিষপান

সাত সংগঠনের তথ্যানুসন্ধান, শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

বিষপানে দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় সেচের পানির নলকূপ অপারেটরের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও জাতীয় কৃষক সমিতি। মঙ্গলবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়ার মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিষপানে দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছে সাতটি সংগঠনের প্রতিনিধিদল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেছে তারা। ওই দুই কৃষক বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তাঁদের পরিবারের। এ ঘটনার পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় গ্রেপ্তার নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে অন্য দুই সংগঠন।

মানবাধিকার সংগঠন এএলআরডি, ব্লাস্ট, বেলা, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস, জাতীয় আদিবাসী ফোরাম, রুলফাও ও পরিবর্তনের যৌথ তথ্যানুসন্ধানকারী দল গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল গোদাগাড়ীর নিমঘটু এলাকা পরিদর্শন করে এবং ভুক্তভোগী পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করে। পাশাপাশি তারা গোদাগাড়ী-তানোর আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়নের (বিএমডিএ) সচিব ইকবাল হোসেন ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

যৌথ তথ্যানুসন্ধানকারী দলে ছিলেন এএলআরডির সহকারী কর্মসূচি সমন্বয়কারী রফিক আহামেদ সিরাজি, কর্মসূচি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য অনন্ত ধামাই, রুলফাওয়ের নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন, পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন, ব্লাস্ট সমন্বয়কারী সামিনা বেগম, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের পক্ষে মজহারুল ইসলাম এবং বেলার রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় স্যান্যাল। যৌথ তথ্যানুসন্ধানকারী দল আগামী দিনে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, বরেন্দ্র এলাকায় একরকম ‘পানি–সন্ত্রাস’ চলছে। বিএমডিএর কার্যক্রমে কোনো জবাবদিহি নেই। তাদের অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায় না। গোদাগাড়ীর নিমঘটু এলাকার যে গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বিরুদ্ধে দুবার অভিযোগ করা হয়েছিল। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তানোরেরও দুজন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। তাঁদের অপসারণের জন্য বলা হলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, পানিসম্পদমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

এদিকে গোদাগাড়ীতে জমিতে পানি না পাওয়ায় দুই কৃষকের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও জাতীয় কৃষক সমিতি। আজ বেলা ১১টায় গোড়াগাড়ী উপজেলার ডাইংপাড়া মোড়ে যৌথভাবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। জাতীয় কৃষক সমিতির গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, পানির অধিকার কৃষকের ন্যায্য অধিকার। এ অঞ্চলের কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছেন। বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বৈষম্যের শিকার। দুই কৃষকের আত্মহত্যা দেশজুড়ে আদিবাসী আন্দোলনের নতুন দিক তৈরি করেছে। কৃষকের সব অধিকার আদায়ে জাতীয় কৃষক সমিতির লড়াই অব্যাহত থাকবে।

যুবমৈত্রীর রাজশাহী জেলার সভাপতি মনিরুদ্দীনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ও মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক, মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন, কৃষক সমিতির জেলার সহসভাপতি ফরজ আলী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, আদিবাসী পরিষদের নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা নাজমুল করিম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী নেতা নরেন পাহান, মতিন পাহান, রবিন হেমব্রম প্রমুখ।