বদরগঞ্জের ছহিরনেরডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়

সাত বছরেও বিরোধ মেটেনি, শিক্ষকদের বেতন বন্ধ

রংপুরের বদরগঞ্জের ছহিরনেরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখলে নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন সবজির চাষ করেছেন
প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ছহিরনেরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা নিয়ে বিরোধের সমাধান সাত বছরেও হয়নি। এতে শিক্ষকেরা ভয়ে ওই বিদ্যালয়ে ঢুকতে না পেরে দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছেন পাশের বাড়িতে। এদিকে বিরোধের সমাধান না হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের চলতি মার্চ মাস থেকে বেতন–ভাতা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা কমিটি।

ওই বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩৩ শতক জমিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টির জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। করোনা শুরুর পর বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ের মাঠ দখলে নিয়ে প্রতিপক্ষ চাষাবাদ করছে। বিরোধের জন্য পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় টিনশেডের তৈরি বিদ্যালয়ের কক্ষগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা।

বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জমি লিখে দিয়ে এলাকার আফরোজা বেগম সেখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। তাঁর মা ছহিরন নেছার নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি করা হয় আফরোজার স্বামী সফিয়ার রহমানকে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৫। শিক্ষক চারজন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, বদলিসূত্রে বছর দুয়েক আগে তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। মূলত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে জমি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন আফরোজা। তিনি (আফরোজা) অন্য দুই সহকারী শিক্ষক বিনা টাকায় চাকরি পাওয়ায় তাঁদের কাছে তিন লাখ টাকা চাচ্ছেন। অন্যথায় বিদ্যালয় সরাতে বলছেন।

তবে আফরোজা বেগম বলেন, ‘টাকা চাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি বিদ্যালয়ের নামে তিন দাগে ৩৩ শতক জমি দিয়েছি। কিন্তু বিদ্যালয় নিজস্ব জমিতে নির্মাণ না করে আমার ভাইবোনদের জায়গায় করা হয়েছে। তাই তাঁরা বিদ্যালয় সরাতে বলেছেন। জমির অংশীদারেরা বিদ্যালয় মাঠে চাষাবাদ করছেন।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নামে এক দাগে ৩৩ শতক জমির কথা দলিলে উল্লেখ আছে। জমিদাতা আফরোজা দলিলের হলফনামায় অঙ্গীকার করেছেন, “দলিলে কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে নিজ খরচে তা সংশোধন করিতে বাধ্য থাকিব নতুবা আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।” দলিলমূলে বিদ্যালয়ের জায়গায় বিদ্যালয় হয়েছে। অন্যত্র সরানোর কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়টি সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও গত বছর থেকে তা ব্যাংকে পড়ে আছে। অনেক চেষ্টা–তদবির করে বিদ্যালয়ের নামে ভবন বরাদ্দ নিয়ে এসেছি। কিন্তু ওই জায়গায় কোনো কিছুই করতে দিচ্ছেন না আফরোজা ও তাঁর পরিবারের লোকজন। মাঠ দখলে নিয়ে তাঁরা চাষাবাদ করেছেন। হুমকির কারণে আমরা বিদ্যালয়ে ঢুকতে না পেরে দাপ্তরিক কাজকর্ম চালাচ্ছি পাশের একটি বাড়িতে। সামনে বিদ্যালয়ে খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কোথায় করাব, তা নিয়ে খুব টেনশনে আছি। এসব সমস্যা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনওকে লিখিতভাবে একাধিকবার জানিয়েছি। উল্টো চলতি মাস থেকে আমাদের সব শিক্ষকের বেতন–ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের অপরাধ, আমরা নাকি বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়েছি। বেতন না পেলে পরিবার–পরিজন নিয়ে আমাদের কষ্টের শেষ থাকবে না।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন সাঈদ বলেন, ‘দলিল অনুযায়ী বিদ্যালয়ের জায়গায় বিদ্যালয়ে আছে। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি। মূলত জমিদাতা আফরোজা জায়গা নিয়ে অহেতুক ঝামেলা করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে চার শিক্ষকের বেতন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।’

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী বলেন, ‘বদলিসূত্রে মোশারফ ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটা জানতাম না। কৌশলগত কারণেই শিক্ষকদের মাসিক বেতন–ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে, যেন তাঁরা নিজেরা সমস্যার সমাধান টানতে পারেন। যা–ই হোক, তাঁদের বেতন–ভাতা দেওয়া হবে। সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টাও করব।’