করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে পাঁচজনের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ছিলেন তিনজন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সাতক্ষীরা শহরের শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালে তাঁর বাবাকে গত মঙ্গলবার ভর্তি করান। বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ অক্সিজেনের ফ্লো কমে যায়। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন। রোগীদের এমন অবস্থা দেখে স্বজনেরা কান্নাকাটি শুরু করেন। অনেকে বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার আনার চেষ্টা করেন। ২০ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমুলিয়া গ্রামের আকরাম হোসেন খান (৬০) বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আইসিইউতে মারা যান। তাঁর ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান বলেন, তাঁর বাবা করোনা সংক্রমিত হয়ে ৪৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বুধবার দুপুরের দিক থেকে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়। রোগীরা চাহিদামতো অক্সিজেন পাচ্ছিলেন না। সে কারণে বুধবার সন্ধ্যার পর তাঁর বাবাসহ কয়েকজন রোগী মারা যান।
অক্সিজেনের চাপ একটু কমে গিয়েছিল। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এতে রোগী মারা যাওয়ার কথা নয়।হুসায়েত সাফায়াত, সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন
মৃত বাকি চারজন হলেন কলারোয়া উপজেলার গোয়ালিয়া গ্রামের সফুরা খাতুন (৬০), সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা গ্রামের খায়রুন্নেছা (৪০), দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আবু জাফর আশরাফুল ইসলাম তুহিন (৪০) ও শ্যামনগর উপজেলার সোনাখালি গ্রামের আশরাফ হোসেন (৪৭)।
এ বিষয়ে করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা বলেন, তাদের অক্সিজেন ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর হঠাৎ করে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে প্রেশার কমে যায়। তখন ৭৬টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত রাখা হয়। অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁরা আটটার দিকে অক্সিজেন সরবরাহ করেন। তিনি দাবি করেন, এক সেকেন্ডের জন্যও অক্সিজেন বন্ধ হয়নি। আগে থেকে অবস্থা খারাপ থাকায় আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল এমন তিনজন রোগী মারা গেছেন।
বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ অক্সিজেনের ফ্লো কমে যায়। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন। রোগীদের এমন অবস্থা দেখে স্বজনেরা কান্নাকাটি শুরু করেন।শেখ মনোয়ার হোসেন, রোগীর স্বজন
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসায়েত সাফায়াতের ভাষ্য, অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা সচল ছিল। তবে অক্সিজেনের চাপ একটু কমে গিয়েছিল। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এতে রোগী মারা যাওয়ার কথা নয়।
এদিকে করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন করোনা সংক্রমিত হয়ে এবং ১০ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ নিয়ে জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়ে ৭৪ জনের ও করোনার উপসর্গ নিয়ে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক সেকেন্ডের জন্যও অক্সিজেন বন্ধ হয়নি। আগে থেকে অবস্থা খারাপ থাকায় আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল এমন তিনজন রোগী মারা গেছেন।কুদরত-ই-খোদা, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা জয়ন্ত সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার আবার বেড়ে ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। এ সময়ে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৩ জনের করোনা করোনা শনাক্ত হয়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয় ৫০ জনের। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। ২৫০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ জন করোনা সংক্রমিত রোগীসহ ২৭৫ জন ভর্তি আছেন।