পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবনের গাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবনের গাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সাগর গিলছে কুয়াকাটার ঝাউবন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পানির স্তর। সমুদ্রের পানির স্তর উঁচু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রকৃতি। সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। প্রতিবছর ঢেউয়ের তোড়ে ও ভাঙনে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতঘেঁষা বনাঞ্চলের হাজার হাজার গাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে ।

দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের কারনে সৈকতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে সৈকতের পাশের ঝাউবনের গাছও সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বেশি উচ্চতার জোয়ারে সৈকতের সহস্রাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এদিকে কুয়াকাটার সৈকতের ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন করে বাগান সৃজন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আগ্রহ হারাচ্ছে বন বিভাগ।

পটুয়াখালী বন বিভাগের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে সরকার কুয়াকাটায় জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। কুয়াকাটার বনের আয়তন ৫ হাজার ৬৬১ হেক্টর। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রাকৃতিক বনসংলগ্ন সৈকতঘেঁষা ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়।

কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া বনাঞ্চলে ২০১০ থেকে ২০১২ অর্থবছর পর্যন্ত নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছিল। পরে গত বছর গঙ্গামতি এলাকায় ৪০ হেক্টর ভূমিতে ঝাউবাগান করা হয়।

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া বনাঞ্চলে ২০১০ থেকে ২০১২ অর্থবছর পর্যন্ত নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছিল। পরে গত বছর গঙ্গামতি এলাকায় ৪০ হেক্টর ভূমিতে ঝাউবাগান করা হয়। কুয়াকাটা সৈকতে ২৫ হেক্টর ভূমিতে আকাশমণিগাছের বাগান ও ২০ হেক্টর ভূমিতে ফলের বাগান করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছর খাজুরা এলাকায় ১০ হেক্টর ও গঙ্গামতি এলাকায় ৭৫ হেক্টর ভূমিতে ঝাউবাগান করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০ হেক্টর নিচু জমি উঁচু করে বাগান করা হয়েছে।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা যায়, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে গাছের মূল থেকে বালু সরে শিকড় বের হয়ে যাচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে বালুর সৈকতে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে বালুর ওপর লুটিয়ে পড়ছে বড় গাছ গাছ। সৈকতে পড়ে থাকা গাছগুলো উপকূলের লোকজন কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আর নিচের অংশ সৈকতেই পড়ে থাকছে।

ভাঙনের কারণে সৈকত ছোট হয়ে আসছে। কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভেঙে যাচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বনের গাছ। ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাবে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত।
বারেক মোল্লা, মেয়র, কুয়াকাটা পৌরসভা

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ বলেন, একসময় কুয়াকাটার সৈকতঘেঁষা নারকেল ও তালবাগানে সারি সারি গাছ ছিল। এতে কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় ছিল। সৈকতে ভাঙন ও সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে তালবাগান বিলীন হয়ে গেছে। নারকেলবাগানটি এখন বিলুপ্তির পথে। ঝাউবাগানও ভেঙে লুটিয়ে পড়ছে সৈকতে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র বারেক মোল্লা বলেন, ভাঙনের কারণে সৈকত ছোট হয়ে আসছে। কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভেঙে যাচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বনের গাছ। ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাবে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন মো. হারুনর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে ঢেউয়ের তাণ্ডব বেড়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় বালু সরে গাছের শিকড় বেরিয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় গাছ মরে যাচ্ছে। সৈকতের ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় সবুজবেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

উপকূলীয় বন বিভাগ ও পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অবিরাম ভাঙন এখন সৈকতের দিকে এগিয়ে আসছে। ভাঙনের কারণে কুয়াকাটাসংলগ্ন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। গঙ্গামতি ও কাউয়ার চর এলাকায় নতুন করে বাগান সৃজন করা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে ২০ হাজার তালগাছ রোপণ করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের স্থায়ী সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। খুব দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এটি হবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষাসহ উন্নয়নের একটি কার্যকর প্রকল্প।