কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করে। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ জাফর আলম। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সাংসদ ধাক্কাধাক্কিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জাহেদুল ইসলামের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেফায়েত সিকদার।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করা ও নির্বাচনী সফরের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সভায় উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলামকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোসলেহ উদ্দিন মানিককে। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িলে পড়লে লিটুর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, মঙ্গলবার রাতে পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে পৌর ভবনের পাশে চিংড়ি চত্বর এলাকায় বসেন চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারসহ ৪০-৫০ জন নেতা–কর্মী।
ওই সময় বেতুয়া বাজার এলাকায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজা শেষে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া-পেকুয়া) সাংসদ জাফর আলম।
ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখে প্লাস্টিকের লাঠি হাতে গাড়ি থেকে নামেন সাংসদ। এ সময় কয়েকজন কর্মী–সমর্থককে পিটুনি দেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা আতিক ও যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারকে ধাক্কা দেন। এতে তাঁরা আহত হন। ওই সময় চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদুল ইসলামও সাংসদের গাড়ি থেকে নেমে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেয়র আলমগীর চৌধুরী সাংসদকে গাড়িতে তুলে দিলে সাংসদ বাড়ি ফিরে যান।
তবে খবর ছড়িয়ে পড়ে মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছে। এ খবরে মেয়র প্রার্থীর বাড়ির এলাকা কাহারিয়াঘোনা থেকে শতাধিক কর্মী-সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে চিংড়ি চত্বর এলাকায় যান। আলমগীরের কর্মী-সমর্থকেরা সাংসদ জাফর আলম ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াবুল হকের (সাংসদের ভাতিজা) বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, সাংসদ হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতে নেতা-কর্মীদের তাড়া করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা হাসানুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গায়ে হাত তোলেন।
সাংসদের এমন আচরণ সম্পর্কে আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘সাংসদের ভাতিজা জিয়াবুল হক ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তা ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাহেদুল ইসলাম সাংসদের অনুসারী। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও জাহেদুলকে অব্যাহতির খবরে সাংসদ এমন আচরণ করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন ছেলে আমার গাড়ির গতিরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় আমি প্লাস্টিকের একটি লাঠি হাতে গাড়ি থেকে বের হয়ে এক ছেলেকে আঘাত করতেই অন্যান্য ছেলেরা পালিয়ে যায়। এ সময় মেয়র আলমগীর এসে আমার পায়ে ধরে বলে, ‘‘ছেলেরা ভুল করেছে। মাফ করে দেন।’’ তখন আমি গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসি। এখানে কাউকে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেনি। এসব অবাস্তব ও অবান্তর কথা।’
জানতে চাইলে জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে সড়ক বিভাগের ডাক বাংলাতে নির্বাচনী সভা করায় আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।’ এখন জেলা আওয়ামী লীগ বলছে, আমি নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছি। এটা একটা হাস্যকর কথা।
জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ অব্যাহতি দেওয়া বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত জানায়নি বা অব্যাহতি দেওয়ার আগে শোকজ নোটিশও দেয়নি। আমি অব্যাহতির ব্যাপারটি নিয়ে স্পষ্ট নই।’