ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আয়োজিত সমাবেশ বর্জন করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সংরক্ষিত (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মহিলা আসনের সাংসদ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমকে প্রধান অতিথি করায় তাঁরা এ সমাবেশ বর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন। পরে তাঁরা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক সমাবেশ করেন।
আজ রোববার সকালে সরাইল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। এর নাম দেওয়া হয় ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস ২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’।
স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে উত্তরীয় না পরিয়ে মহিলা সাংসদ অসম্মান করেন। এরপর থেকে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাংসদের সব অনুষ্ঠান ঘোষণা দিয়ে বর্জন করছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী ও ডেপুটি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা সাংসদকে সম্মান দেখাতে চান। কিন্তু ২০১৯ সালের বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেছেন। তাই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে উনি (সাংসদ) থাকলে তাঁরা তা বর্জন করবেন।
তাঁরা আরও বলেন, সাংসদ যদি নিজেকে সংশোধন করেন, তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা আবার তাঁর উপস্থিতি আছে, এমন অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেবেন। তা না হলে সব অনুষ্ঠান বর্জন করে যাবেন।
সকালের ওই সমাবেশ বর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৃথক সমাবেশ করেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের ব্যানারে এর আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী। শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ মানুষ এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে যোগ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হকও।
ইউএনও আরিফুল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা কেন উপজেলা প্রশাসনের সমাবেশ বর্জন করেছেন, তা তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। এ বিষয়ে আগে থেকে তিনি কিছু জানতেনও না।
সাংসদ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আলাদা অনুষ্ঠান করেছেন, এটি তাঁদের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার বিষয়ে বলেন, এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উপজেলার সব প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক আছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সাংসদের স্বামী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ দলীয় কোন্দলে খুন হন। ইকবাল আজাদের খুনের মামলায় আসামি হন ২৯ জন। এর মধ্যে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পাঁচ সন্তান আছেন। এ ছাড়া আসামিদের অধিকাংশই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।