চাকসু নির্বাচন

সরকার 'অনুমোদন' দিলেই নির্বাচন

চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর সরব আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, সরকার অনুমোদন দিলে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

তবে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সর্বশেষ নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নাজিম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডেকেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে পারে।

চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রসংগঠনগুলো গত জানুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে।

প্রায় ২৯ বছর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এক বছর মেয়াদের সে চাকসু কমিটি এখনো বহাল। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ কার্যকর না থাকায় চাকসু ভবন এখন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যানটিন হিসেবে পরিচিত।

সরকারের ‘অনুমোদনের’ প্রয়োজন

চাকসু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, কেননা এখানে আইনশৃঙ্খলার বিষয় জড়িত। আর ছাত্রসংগঠনগুলো সহাবস্থান নিশ্চিত এবং সংঘাত না করার ব্যাপারে লিখিত দিলে তিনি নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন।

কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো কিছু করতে হয়নি, তাহলে চাকসুর ক্ষেত্রে কেন—এই প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর কেন্দ্রেই অবস্থিত। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যতটা সহজ, এখানে ততটা নয়। এ জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি আচার্য রাষ্ট্রপতিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিতে প্রস্তুত আছেন। তবে নির্বাচন ঘিরে কোনো সংঘাত বা প্রাণহানি হবে না, ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছ থেকে এমন লিখিত অঙ্গীকার চান তিনি। আপাতত ডাকসু নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণে রাখছেন বলে জানান তিনি।

প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়েই তো চাকসু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। বাম ছাত্রসংগঠন আর ছাত্রদলের ‘কার্যকর’ প্রতিনিধি কারা, তা প্রক্টর কার্যালয়ের জানা নেই। বারবার বলা হলেও সংগঠনগুলো কমিটির তালিকা জমা দেয়নি। তাহলে নির্বাচন নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাদের সঙ্গে আলোচনা করবে?

কর্তৃপক্ষের অনীহা দায়ী

চাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। এতে চাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকের আয়োজনের দাবি জানায় সংগঠনটি। দাবি আদায়ে ১৫ দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে।

লিখিত প্রতিশ্রুতি ও কার্যকর প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি অমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রসংগঠনগুলোকে কোনো লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হয়নি। আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় না বসে এবং নির্বাচন আয়োজনের প্রাথমিক কাজ (গঠনতন্ত্র সংশোধন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি) না করে মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে। এগুলো না করে কর্তৃপক্ষের উচিত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।

১২ ফেব্রুয়ারি চাকসু নির্বাচনের দাবিতে চার দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে ছাত্রলীগ। সংগঠনটিও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও ১৪ জানুয়ারি চাকসু নির্বাচনের দাবি তোলার পর অন্তত ৫ দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, চাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ কীভাবে প্যানেল দেবে, তা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ঠিক করবেন। এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ হচ্ছে নির্বাচন দিয়ে ছাত্রসংসদ সচল করা। কিন্তু তা না করে ছাত্রসংগঠনগুলোর কমিটি আছে কি নেই, সংঘাত হচ্ছে—এই ধরনের বাহানা খুঁজে বেড়াচ্ছে। এটি নির্বাচন না দেওয়ার পাঁয়তারা, যা ছাত্রসমাজ মানবে না।