মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কটি নানা কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে মৌলভীবাজার জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী এই সড়কের অপর নাম এখন ‘দুর্ভোগ’। চার বছর ধরে সড়কটি ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। তিন বছর ধরে এভাবে থাকার পর গত বছরের নভেম্বরে এর সংস্কারকাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই কাজের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। এই সময়ে সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এক বছরেও ৭০ শতাংশ কাজ বাকি থাকায় সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কারকাজের দায়িত্ব পায় কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএবি-আরসি প্রাইভেট কোম্পানি। তবে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরে এ কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করে কুলাউড়ার এমআর ট্রেডিংয়ের মুহিবুর রহমান। কাজ শুরু হলেও পরে দফায় দফায় সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এই সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন অংশে সংস্কারকাজ হবে। এর মধ্যে সড়কে যেসব বাজার এলাকা রয়েছে, সেসব স্থানে কাজ হবে না। বাজার এলাকায় পরবর্তী সময়ে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ হবে। অন্যদিকে যেসব স্থান বন্যায় তলিয়ে যায়, সেসব স্থানেও কাজ হচ্ছে না। সেসব স্থান উঁচু করে পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির স্থানে স্থানে গর্তে ভরা। ভাঙা সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এখনো নিয়মিত সড়কটির পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। এতে গর্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংস্কারকাজ আংশিক শেষ হয়ে পরিত্যক্ত থাকায় বৃষ্টিপাতের কারণে সম্পন্ন অংশেরও পিচ-পাথর উঠে যাচ্ছে। সড়কে চলা যানবাহনের ঝাঁকুনিতে অতিষ্ঠ যাত্রীরা। যানবাহনের বডিও হচ্ছে ক্ষতির শিকার।
সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয় এক বছর আগে। সড়কের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর থেকেই ভাঙাচোরা সড়ক ফেলে রাখা হয়। এর ফলে বৃষ্টিপাত ও যানবাহনের চাপে সড়কের বালু, পাথর সটকে পড়ে সড়কজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০ কিলোমিটার সড়কে দুই বছর ধরেই ইট-সুরকি দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা চলেছে। নিরাপদে গাড়ি চালাতে চালকদের যেমন সতর্ক থাকতে হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরা সারাক্ষণই থাকছেন ঝাঁকুনির মধ্যে। সেই সঙ্গে ঝুঁকির মধ্যেও বটে। যানবাহনের ঝাঁকুনিতে কেউ কেউ অসুস্থ হয়েও পড়ছেন বলে যাত্রীরা ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
চাতলাপুর স্থল শুল্কস্টেশন ও ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরের মনু স্থল শুল্কস্টেশনের মধ্য দিয়ে দুই দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয় মূলত এ সড়ক ব্যবহার করেই। মৌলভীবাজার জেলা সদরের এই সড়কে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর—তিন উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করেন। এখন সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ তো দূরের কথা, একেবারেই না আগানোয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
শমশেরনগরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম খান, ব্যাংকার নূপুর বৈদ্য, সংস্কৃতিকর্মী অমলেশ শর্মা বলেন, এত দিনেও রাস্তার সংস্কারকাজ হয়নি। অসুস্থ কিংবা গর্ভবতী নারীদের নিয়ে এই রাস্তায় যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। অনেকে বাধ্য হয়ে তাই অতিরিক্ত ২০ কিলোমিটার ঘুরে শ্রীমঙ্গল শহর হয়ে মৌলভীবাজারে আসা যাওয়া করেন।
সিএনজি অটোরিকশাচালক রতন দে ও বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘এই সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে এখন গাড়ির নাম হয়েছে “ভাঙগাড়ি”। আর যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণে নাম দিয়েছেন অনেকে একে “রোগী বানানোর সড়ক” বলে তামাশা করেন। আমাদের গাড়ি বিকল ও যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়েই এখান দিয়ে চলাচল করছি।’
জানতে চাইলে এমআর ট্রেডিংয়ের ঠিকাদার মুহিবুর রহমান বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো নতুন করে কাজের সময়সীমা বাড়ায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সময় বাড়ালে ২০ কিলোমিটার সড়কের কাজও পুনরায় শুরু হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সড়কটি ইতিমধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।’