সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাবার লাশ নিয়ে ফিরলেন সুজন

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাবার লাশ পেয়েছেন সুজন। লাশ নিয়ে উপকূলে আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আজ রোববার দুপুরে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটায়
ছবি: প্রথম আলো

নৌকার শ্রমিক হিসেবে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন মো. সুজন। মাঝসমুদ্রে যখন তাঁরা মাছ ধরায় ব্যস্ত ঠিক তখন পাশের একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নৌকাটি যোগ দেয় উদ্ধারকাজে। কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একপর্যায়ে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা চারটি লাশ পান।

কাছে গিয়ে একটি লাশের মুখের দিকে তাকিয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সুজন। লাশটি ছিল সুজনের বাবা মোহাম্মদ শাহজাহানের।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকায় কোম্পানির জেটিতে কথা হয় মো. সুজনের সঙ্গে। কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছিলেন না। ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘সমুদ্রে গিয়েছিলাম মাছ ধরতে, কিন্তু নিয়ে এলাম বাবার লাশ। মা ও ছোট ছোট ভাইবোনকে কী জবাব দিব জানি না।’

গতকাল শনিবার ভোরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় এফভি যানযাবিল নামের মাছ ধরার জাহাজটি ডুবে যায়। ওই সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে মাছ ধরার নৌকার লোকজনেরা ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। দুপুরের সময়ও নিখোঁজ নাবিকদের উদ্ধারে থেকে যায় আশপাশের কয়েকটি নৌকা। উদ্ধার অভিযান চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় চারটি লাশ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর লোকজন।

সেন্ট মার্টিনের ৬৫ নটিক্যাল মাইল উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে। জাহাজের মালিক ও কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। জাহাজটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থেকে এক সপ্তাহ আগে সাগরে যায়।

জাহাজের মালিক পক্ষ সূত্র জানায়, মাছ ধরার জাহাজটি ২৬ জন নাবিক নিয়ে ডুবে যায়। ওই সময় আশপাশের অন্যান্য মাছ ধরার জাহাজ ১৩ জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার ও চারজনের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও এখনো নিখোঁজ আছেন আটজন। নিখোঁজদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড একটি ও নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ অভিযান চালাচ্ছে।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিন (৩৮), তৃতীয় কর্মকর্তা সোয়াইবুল ইসলাম (৩৭), মো. রফিক (৪২), মেহের আলী (৩৮), আমির হামজা (৪০), মো. ইউনুস (৩৭) মো. পাভেল (৩২) ও আবুল বশর (২৭)।

জাহাজডুবির ঘটনায় বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো রোববার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়

উদ্ধার হওয়া চারজন হলেন রফিকুল ইসলাম ওরফে নাছির (৩৫), মোহাম্মদ শাহজাহান (৪৭), মো. ইসমাইল (৪৩) ও মো. সালাম গাজী (৪২)। নিখোঁজ ও নিহত সবার বাড়ি বিভিন্ন এলাকায়।

রোববার দুপুরে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটায় গিয়ে দেখা যায়, চারটি লাশ নদী থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। এ সময় স্থানীয় নারী–পুরুষেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনদের আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধার হওয়া চকরিয়ার মো. ফোরকান বলেন, জাহাজটি ঘোরানোর সময় কাত হয়ে গেলে ক্যাপ্টেন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটি ডুবে যায়। মো. কায়সার (২৮) বলেন, ঘটনার সময় প্রায় সবাই ঘুমে থাকায় জাহাজ থেকে বের হতে পারেননি।

জাহাজের মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, আপাতত নিহত লাশগুলো দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা ও অ্যাম্বুলেন্স খরচ দিয়ে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনেরা রোববার দুপুরের পর নিজেদের বাড়ির দিকে লাশ নিয়ে রওনা হন।

কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশনস) হাবিবুর রহমান বলেন, উদ্ধার হওয়া চারটি লাশ পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখনো আটজন নিখোঁজ। নিখোঁজদের উদ্ধারে তিনটি জাহাজ কাজ করছে। কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কাজ করছে।