সমাবেশের শেষ মুহূর্তে বিস্ফোরণ থেকে সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ২০

দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানা–সংলগ্ন সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল পাঁচটার কাছাকাছি। প্রতিবাদ সভা চলছিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট রূপালী চত্বরে। সভার শেষ বক্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের বক্তব্য চলছিল। এরই মধ্যে সভাস্থলের কাছাকাছি এলাকায় হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ। শুরু হলো দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি। ধাওয়া, পাল্টাধাওয়ায় পণ্ড হয়ে গেল প্রতিবাদ সভাটি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ইটপাটকেল হামলায় আহত হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হকসহ অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন।

আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমানের অভিযোগ, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার কারণে তাঁরা প্রতিবাদ সভাটি শেষ করতে পারেননি। তবে কাদের মির্জা বলছেন, বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো লোক জড়িত নন।

গতকাল সোমবার বিকেলে বসুরহাট রূপালী চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মঙ্গলবার বিকেলে রূপালী চত্বরে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটার কয়েক মিনিট আগে শেষ বক্তা হিসেবে মিজানুর রহমান বক্তৃতা করছিলেন। ঠিক এমন সময় সভাস্থলের অদূরে মাকছুদা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যে সভাস্থলের নারী-পুরুষসহ দলীয় নেতা–কর্মীরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এতে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সভা পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর মিজানুর রহমানের অনুসারীরা কাদের মির্জার অনুসারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় জিরো পয়েন্ট ও মাকছুদা বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় দুই পক্ষের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষকালে ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।

সূত্র জানায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং দুই পক্ষকে দুই দিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে পুলিশ কাদের মির্জার অনুসারীদের পৌরসভার ভবনের দিকে, আর মিজানুর রহমানের সমর্থকদের রূপালী চত্বর এলাকায় সরিয়ে দিয়ে মাঝখানে বালিকা বিদ্যালয়ের মোড় ও রূপালী চত্বরসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার কারণে বসুরহাট বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় সাতটার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীরা বসুরহাটে সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মিজানুর রহমান অভিযোগ করেছেন, তাঁদের প্রতিবাদ সভার শেষ পর্যায়ে তিনি বক্তৃতা দেওয়ার সময় কাদের মির্জার সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। হামলার কারণে তাঁরা সভাটি শেষ করতে পারেননি। এ সময় মির্জার অনুসারীদের হামলায় তাঁদের ১০-১৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন। মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনে দিয়ে কাদের মির্জার লোকেরা সভায় হামলা করলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।

তবে হামলার অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আবদুল কাদের মির্জা। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁদের (মিজানুর রহমান) লোক বিকেল থেকে গোটা বসুরহাট শহরে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। একপর্যায়ে তাঁদের একজন বঙ্গবন্ধু চত্বরের কাছে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ীসহ লোকজন তাঁকে ধাওয়া করেন। ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। তা ছাড়া মাঝখানে পুলিশ দাঁড়ানো ছিল।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে রূপালী চত্বরে মিজানুর রহমানের অনুসারীদের প্রতিবাদ সভা চলাকালে হঠাৎ দুই পক্ষের ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পৌরসভার ফটকের ভেতর থেকে কাদের মির্জার লোকজন বৃষ্টির মতো তাঁদের ওপর ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ ঘটনায় তিনিসহ কমপক্ষে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।