প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এর মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে উপজেলা কমিটির নতুন নেতৃত্ব। এবার সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে চান অন্তত ১১ জন। ফলে বদল আনা হচ্ছে সম্মেলনের নিয়মকানুনে। প্রথমবারের মতো দলের উপজেলা সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে কিনতে হচ্ছে মনোনয়নপত্র। তা–ও লাখ টাকায়।
যদিও মনোনয়নপত্রের জন্য এত বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। অথচ দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই মনোনয়নপত্রের জন্য এক লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি দল হয়ে সম্মেলনের খরচের জন্য কারও কাছ থেকে চাঁদা তোলার পক্ষপাতী নন অনেক নেতা। তবে সম্মেলনের খরচের জন্য দলের সভায় অনেকে প্রস্তাব করেন, যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁরা এক লাখ টাকা করে দেবেন। পরে প্রার্থীদের জন্য এক লাখ টাকা ঠিক করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে হলে এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এই টাকা ব্যয় করা হবে সম্মেলনের খরচের জন্য। প্রার্থীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত ও এক লাখ টাকা করে জমা নেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত সভাপতি পদে তিনজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছয়জন জীবনবৃত্তান্ত ও টাকা জমা দিয়েছেন।
তবে মনোনয়নের জন্য লাখ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ প্রার্থী। তাঁরা বলছেন, উপজেলা কমিটির পদ পেতে যদি এক লাখ টাকা দিয়ে মনোনয়নপত্র নিতে হয় তাহলে তো গ্রামগঞ্জের গরিব, সৎ, ত্যাগী নেতারা আর আওয়ামী লীগের বড় পদে আসতে পারবেন না। এই প্রক্রিয়ায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ টাকাওয়ালাদের কাছে চলে যাবে। অথচ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র ফি ছিল ৩০ হাজার টাকা।
আগামী ৩১ মে রায়পুর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনস্থল রায়পুর শহরের মার্চেন্টস একাডেমি মাঠ। এতে প্রধান অতিথি থাকার কথা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী।
১৯ বছরের বেশি সময় পর হতে যাওয়া সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা শহর ছেয়ে গেছে ব্যানার, বিলবোর্ড, পোস্টারে। বেশির ভাগই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের। নেতা–কর্মীদের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে জেলা কমিটির শখ্য রয়েছে। যদিও তাঁদের দাপট ও পেশিশক্তির কাছে অনেকে অসহায়।
রায়পুর আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০০৩ সালে। ওই কমিটিতে কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন ৬৭ জন। এর মধ্যে সভাপতিসহ মারা গেছেন ২০ জন নেতা। দল চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এতে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। ২০ বছর ধরে নেই দলীয় কার্যালয়ও।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (১৯৮৯-৯০) ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীদের কাছে লাখ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এ দলের নেতা বা প্রার্থী হতে লাখ টাকা দাবি অযৌক্তিক। এটি আমরা মেনে নিতে পারছি না।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মারুফ বিন জাকারিয়া বলেন, চলতি মাসের শুরুতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। এর পর কমলনগর উপজেলাও সম্মেলন করা হয়। সেসব সম্মেলনে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। কিন্তু রায়পুরের সম্মেলনে এসে টাকা দাবি করা হয়। এটা অনুচিত। তাঁর কাছেও টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সভাপতি প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম এসেছে তাঁরা হলেন বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মুন্সী, চট্টগ্রাম এক্স শাহীন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুনুর রশিদ। সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের নাম এসেছে তাঁরা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, নাজমুল কাদের গুলজার, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হাসান ওরফে রাসেল।
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন প্রথম আলোকে জানান, সম্মেলনের জন্য ৩৯৫ জন কাউন্সিলরের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান ও দলের নির্দেশ সবাই মেনে নিতে প্রস্তুত।